ডেস্ক রিপোর্ট। দি সিলেট পোস্ট
ঘড়ির কাঁটায় তখন সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা ৫৬ মিনিট। পড়াশুনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বর, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নার সঙ্গে কথা বলছি।
ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর শুনে ঘাবড়ে যান তামান্না আক্তার নূরা। এরপর তাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষণিকের জন্য তামান্না বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে কেঁদেই ফেললেন। তাকে কান্না থামাতে বললেন প্রধানমন্ত্রী। কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম দেন তামান্না। এ সময় তামান্না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান।
প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি তামান্নাকে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ একটা আবেদন করার পরামর্শ দেন। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে তামান্নাকে সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তামান্নার সঙ্গে টানা ৪ মিনিটের কথাপোকথনে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে একাধিকবার সাহস হারাতে নিষেধ করেন। বলেন, সাহস আর মনোবল থাকলে তুমি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপে নাম্বারে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। ফোন রিসিভ করতেই তামান্নার ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বর বলেন, আমি লন্ডন থেকে শেখ রেহানা বলছি। আমি কি তামান্না নূরার সঙ্গে কথা বলছি। তখন কান্না করতে থাকে তামান্না। কান্না থামাতে বলে শেখ রেহেনা বলেন, কেঁদো না। টানা ভালো রেজাল্ট করায় তোমাকে অভিনন্দন। তোমার সংগ্রামের কথা শুনেছি। তুমি খুব সাহসী। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমাকে সহযোগিতা করে যাবো। যারা সাহস রেখে চলে তারা কখনো হেরে যায় না।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির সন্তান তামান্না আক্তার নূরা।জন্ম থেকেই দুটি হাত, একটি পা নেই তার। এক পায়ে লিখেই প্রত্যেকটি পাবলিক পরীক্ষা পিইসি, জেএসসি, এসএসসিতে অর্জন করেছেন জিপিএ-৫। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও জিপিএ-৫ অর্জন করেন তিনি।
গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পেরে দারুণ খুশি তামান্না। তিনি বলেন, প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। মধুর আবেগে থর থর করে কাঁপছিল আমার ভেতরটা। মনে হচ্ছে আমার জীবনে সৃষ্টি হয়েছে ইতিহাস। অনভূতি তো আপনাদের বুঝাতে পারবো না। এতোটাই আনন্দিত হয়েছিলাম যে, হাসতে পারিনি, কেঁদে ফেলেছিলাম। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আমার পিছনের গল্প শুনাতে চেয়েছিলাম। মনে হয় উনি ব্যস্ত থাকার কারণে বেশি কথা বলেননি তিনি। তবে আমাকে নিয়মিত ভালোভাবে পড়াশুনা এবং নিজের যত্ন নিতে বলেন।
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি লিখেছিলেন তামান্না নূরা। তামান্নার লেখা চিঠি প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার পরে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে তামান্নার আঁকা বিভিন্ন ছবিও দেওয়া হয় ওই চিঠির সঙ্গে। পরম করুণাময় আল্লাহর অসীম দয়ায় তামান্নার সঙ্গে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা কথা বলেছে। আশাকরি সবার দোয়ায় তামান্না তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় তামান্না নূরা। তামান্নার বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তামান্নার ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
মন্তব্য করুন