নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে।।
হবিগঞ্জে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রেমিকের সহযোগীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক না করায় ব্লেড দিয়ে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় প্রেমিকাকে।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ওই কিশোরীর প্রেমিক গ্রেফতারকৃত খলিল উদ্দিন (২০)। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হবিগঞ্জ পিবিআই’র পুলিশ সুপার মো. আল মামুন শিকদার জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি একেবারেই ক্লুলেস ছিল। আমরা অবিরাম পরিশ্রম করে প্রযুক্তির সহায়তায় বিষয়টির রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নিহতের প্রেমিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পিবিআই’র ইন্সপেক্টর মো. মোক্তাদির হোসেন জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে প্রেমিককে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে গ্রেফতার করা হয় তার সঙ্গীকে। পরবর্তীতে তাদের দেখানো স্থান থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ব্লেড ও ওড়না উদ্ধার করা হয়েছে।
খলিল উদ্দিনের দেওয়া স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, নবীগঞ্জ উপজেলার হরিনগর গ্রামের মিরাশ উদ্দিনের ছেলে খলিল উদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয় বাঘাউড়া গ্রামের এক কিশোরীর (১৭)। এক সময়ে কিশোরীর মোবাইল ফোন নাম্বার নিয়ে তার সঙ্গে কথোপকথন চালায় খলিল। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই কিশোরী নিজেকে প্রেমিকের কাছে রীমা নামে পরিচয় দিতো। কয়েকদিন পূর্বে তারা মধ্যরাতে দেখা করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে অসুস্থতার কথা বলে খলিলের কাছে দুই হাজার টাকা ধার চায় কিশোরী। ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে দেখা করে টাকা নিতে বলে খলিল।
এদিকে সন্ধ্যায় দেখা হয় সহযোগী গোলাম হোসেনের সঙ্গে। এ সময় সে জানায় রাতে ওই কিশোরীর সঙ্গে দেখা করতে যাবে। তখন গোলাম হোসেনও তার সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। যথারীতি তারা মধ্যরাতে দেখা করতে যায়। কিছুক্ষণ পর কিশোরী বাড়ির পাশের হাওরে একটি জমিতে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে আসে। এ সময় তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। বিষয়টি দূর থেকে লুকিয়ে দেখে গোলাম হোসেন। তাদের শারীরিক সম্পর্ক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোলাম হোসেন ছুটে এসে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে জোরজবরদস্তি করতে থাকেন। কিন্তু কিশোরী তাতে আপত্তি করেন। কোন অবস্থাতেই তাকে রাজি করানো সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে গোলাম হোসেন ওড়না দিয়ে তার হাত ও গলা পেঁচিয়ে ধরে। দুজন ওড়নার দুই দিক থেকে টান দিয়ে শ্বাসরোধ করে ব্লেড দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করে ফেলে যায়।
পরদিন বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ জমি থেকে তার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ২৮ ডিসেম্বর নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ঘটনার পর থেকেই তদন্তে নামে পিবিআই। দফায় দফায় চালানো হয় অভিযান। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় নবীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রেমিক খলিল উদ্দিনকে। পরে তার দেওয়া তথ্যে গ্রেফতার করা হয় গোলাম হোসেনকে। তাদের দেখানো স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত ওড়না ও ব্লেড।
মন্তব্য করুন