নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে।।
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে জলমহাল এবং জমির বিরোধ নিয়ে প্রায়ই ছোটবড় দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। অবশ্য উপজেলাকে দাঙ্গামুক্ত করতে বেশ তৎপর রয়েছে পুলিশ।
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের বিভিন্ন গ্রামে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া দেশীয় অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন সময় নেওয়া পদক্ষেপের কারণে আগের তুলনায় দাঙ্গার প্রবণতা অনেকটাই কমে এসেছে।
আজ (রবিবার) বানিয়াচং উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ১৪টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের দিনে পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় এ নিয়ে এখন চলছে নানান জল্পনা কল্পনা।
তবে পুলিশ বলছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে। নির্বাচনে যে কোনা ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এরই অংশ হিসেবে গ্রামে গ্রামে চলছে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ও বিট পুলিশিং সভা। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনী মতবিনিময় সভা করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্যমতে, ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৭০০ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টেঁটা, ফিকল, ঢাল, রাম দা, ছুরি।
শুধু চলতি মাসেই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২১ ডিসেম্বর মুরাদপুর ইউনিয়নের তালেবপুর, রহমতপুর, শাহাজালাল পুর ও মুরাদপুর গ্রাম থেকে ৫০০ অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
২০ ডিসেম্বর মক্রমপুর ইউনিয়নের পুরান পাথারিয়া ও সাকিনে অভিযান চালিয়ে ৫০০ টেঁটা, ফিকল ও লাঠি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, গত ১৩ ডিসেম্বর পৈলারকান্দি ইউনিয়নের শুধুমাত্র পৈলারকান্দি গ্রাম থেকেই প্রায় এক হাজার ৫০০ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ১১ ডিসেম্বর রাধাপুর, মনপুর, বড়কান্দি গ্রাম থেকে উদ্ধার হয় দুই শতাধিক অস্ত্র।
দুর্গম এলাকা হওয়ায় মক্রমপুর, সুজাতপুর, মন্দরী ও পৈলারকান্দি ইউনিয়ন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই ইউনিয়নগুলোর অনেক ঘরেই রয়েছে দেশীয় অস্ত্র। প্রতি বছরই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যেখানে ব্যবহার হয় এই দেশীয় অস্ত্রগুলো।
চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের উদ্ধার অভিযানের পর এখনো বিভিন্ন বাড়িতে রয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র।
পুলিশও বিষয়টি স্বীকার করেছে। এ কারণে এই ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরান হোসেন বলেন, মক্রমপুর, সুজাতপুর, মন্দরী ও পৈলারকান্দি ইউনিয়ন অত্যন্ত দুর্গম এলাকা। এ সব এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না। যে কারণে ইউনিয়নগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি কেন্দ্রেই বিপুলসংখ্যক আনসার, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ রঞ্জন দে বলেন, উপজেলার সব ইউনিয়নে বিট পুলিশিং সভা করা হয়েছে। এ সব সভায় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীদের যত অভিযোগ-অনুযোগ ছিল সবকিছুই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। নির্বাচনে যেন তাঁরা সংঘাত-সংঘর্ষে না জড়ান সে জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
মন্তব্য করুন