।। মাহবুবুল আলম।।
২০০৯ থেকে ২০২১ এই সময়ে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্দমনীয় গতিতে। এই সময়টা বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের এক স্বর্ণালী যুগ। এই সময়ে উন্নয়নের প্রায় প্রতিটি সূচকেই ঈর্ষনীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতার প্রমাণ বহন করে। মাথাপিছু আয়, খাদ্য ও পুষ্টিপ্রাপ্তি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সামাজিক নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। এমনকি, ভয়াবহ করোনা মহামারির অভিঘাত দীর্ঘ লকডাউনও দেশের অগ্রগতিকে আটকাতে পারেনি। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারে থাকা টানা একযুগ পূর্ণ করেছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর বিয়োগান্তক হত্যাকান্ডের পর ১৯৯৬ সালে ৫ বছরের জন্য আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। এ সময় অর্থনীতির চাকা কিছুটা সচল হয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে এসে সেই চাকার গতি অনেক শ্লথ হয়ে যায়। তারপর পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে উন্নয়ন নয় নিজেদের ভাগ্যন্নোয়ন ও দেশকে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার নির্বাচিত হয়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতা পাওয়ার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে।
২০২১ সালে শেষ প্রান্তে বাংলাদেশের জন্য একটি সুখবর বয়ে নিয়ে এলো! বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে যা হাসিনার সাফল্যের ডানায় আরও বিশাল একটি সাফল্যের পালক যুক্ত করলো! ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬ এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২ এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২৫ দশমিক ২। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন; বাংলাদেশের পয়েন্ট ২০২০ সালে ছিল ৭৫.৩।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘে অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেটি কি না জাতিসংঘের নির্ধারিত উত্তরণের তিনটি মানদন্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্বদরবারে এ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং আরও অধিকতর উন্নয়নের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে। জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের মধ্য দিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটল বাংলাদেশের। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভায় বুধবার এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই ঐতিহাসিক অর্জনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার এক মহান মাইলফলক, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে এই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের যে অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন যাত্রা- এটি তারই একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এই সাফল্যের অংশীদার এই দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। এর ফলে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি মিলবে। সংস্থাটির কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির চেয়ার টেফারি টেসফাসো শুক্রবার রাতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্কে সিডিপির পাঁচ দিন ব্যাপী ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভা শেষে এই ঘোষণা আসে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বিএসএস) এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে।
জাতিসংঘের রীতি অনুযায়ী, কোনও দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদন্ডপূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের মতো মানদ- অর্জনে সমর্থ হওয়ায় এই সুপারিশের আওতাভূক্ত হয়েছে। একমাত্র দেশ হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ৩টি মানদন্ডই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। ২৪ নভেম্বর ২০২১ রাতে এক টুইটা বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা। রেজুলেশনটি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে পরবর্তী ধাপে উত্তরণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলো। এটি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় একটি যুগান্তকারী অর্জন যা এমন এক সময়ে অর্জিত হলো যখন বাংলাদেশ মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে। টুইট বার্তায় এ বিষয়ে রাবাব ফাতিমা লিখেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ঐতিহাসিন সুপারিশ গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের ক্ষেত্রে এর চেয়ে দারুণ উপলক্ষ আর কি হতে পারে! জাতির বহুদিনের আশা-আকাঙ্খা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-২০২১ অবশেষে পূর্ণতা পেলো। এর আগে চলতি বছরে ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বৈঠকে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছিল। এর ৯ মাসের মাথায় সেটি জাতিসংঘে গৃহীত হলো। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ আর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকবে না। উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভূক্ত হবে।
স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’সূত্রঃ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) বাংলাদেশের অর্জনক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বর্তমান সরকারের টানা এক যুগের শাসনামল ‘উন্নয়নের স্বর্ণালী যুগ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে দেশের সার্বিক অথনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। তা নিন্মে এতে বলা হয়েছে, অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.০১ শতাংশ, ২০১৯-২০২০ অর্থবছর তা দাঁড়ায় ৮.১৫ শতাংশে। অর্থাৎ এ সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২.১৪ শতাংশ বেড়েছে। সে সময় জিডিপির আকার ছিল ৯১.৬ বিলিয়ন ডলার, তা বেড়ে হয়েছে ৩৩০.১ বিলিয়ন ডলার। জিডিপির আকার বেড়েছে ২৩৮.৫ বিলিয়ন ডলার। একইভাবে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল ৬৮৬ মার্কিন ডলার। তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে। অর্থাৎ মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১ হাজার ৩৭৮ মার্কিন ডলার। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছর দেশে মোট কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় ৬ কোটি ৮২ লাখ। কর্মসংস্থান বেড়েছে ২ কোটি ৯ লাখ। এ সময় মূল্যস্ফীতির বার্ষিক গড় ছিল ১২.৩০ শতাংশ। তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৬৫ শতাংশে। উচ্চ দারিদ্র্েযর হার ছিল ৪০ শতাংশ। তা কমে দাঁড়ায় ২০.৫ শতাংশে। নিম্ন দারিদ্র্েযর হার ছিল ২৫.১ শতাংশ। তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৫ শতাংশে। অর্থাৎ ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের তুলায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছর উচ্চ দারিদ্র্েযর হার কমেছে ১৯.৫ শতাংশ এবং নিম্ন দারিদ্র্েযর হার কমেছে ১৪.৬ শতাংশ। এছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকায়। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বেড়েছে ৭৯ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।
২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে বিনিয়োগ-জিডিপির অনুপাত ছিল ২৬.১৯ শতাংশ। তা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৩১.৭৫ শতাংশে। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) ছিল মাত্র ৭৬৮.৬৯ মিলিয়ন ডলার। তা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের চেয়ে বর্তমান সরকারের সময় এ ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় উন্নয়ন হয়েছে। বাজেট বরাদ্দ থেকেও বিগত আর বর্তমান সরকারের শাসনামলে তুলনা করা যায়। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে তৎকালীন সরকারের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭৯ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ছিল ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ২ লাখ ৫ হাজার ১৫ কোটি টাকায়। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। মার্চেন্ডাইজ রপ্তানি এক যুগের ব্যবধানে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে এ খাতে আয় হয়েছিল ১৪.১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০২০ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০.৫ বিলিয়ন ডলারে। বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারের সময় অর্থাৎ ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭.৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৮.২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৬.১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতি ছিল ২ লাখ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ১০ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকায়। ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১০.৮ শতাংশ, তা কমে দাঁড়ায় ৮.৮৮ শতাংশে। ঋণের সুদের হার ছিল ১২.৩ শতাংশ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৭.৬ শতাংশে। পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা ৪ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। জামায়াত-বিএনপি শাসনামলে পুঁজিবাজারের দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৮.৫ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৬৪৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ দেশের ভগ্নপ্রায় পুঁজিবাজারের ভিত্তি অনেক মজবুত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার শুরু থেকেই কৃষি খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের তৃতীয় ধান উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে সারের দাবিতে কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি এবং কৃষি ঋণের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ভতুর্কি দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা এবং কৃষি খাতে গড়ে ঋণ বিতরণ করেছে ৬ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছর কৃষি খাতে মোট ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ করেছে ২২ হাজার ৭৪৯ টাকা। গত এক যুগে চাল উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। এ সময় দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে, শিল্পায়নের প্রয়োজনে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে। এক পর্যায়ে সরকার কৃষিজমিতে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ৮৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ মেট্রিক টন চাল।
বিএনপি-জামায়াত জোটের পর সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশে বিদ্যুতের অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। যার প্রভাব সামাজিক-অর্থনৈতিক খাতের উন্নয়নকে ব্যাহত করেছিল। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারি খাতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ওপর জোর দেয়। এতে বিরোধী দলসহ দেশের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবীর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা ২১ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াটে দাঁড়ায়। এছাড়া, সে সময় বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠি ছিল ৪৭ শতাংশ, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা ৯৯ শতাংশে দাঁড়ায়। পার্বত্য অঞ্চলের কিছু দুর্গম অংশে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে এসব এলাকায় সোলার বিদ্যুৎ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তাহলে সরকারের প্রতিশ্রুতি দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় চলে আসবে।
নাগরিক সুবিধা খাতেও ঘটেছে ব্যাপক উন্নয়ন। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে সুপেয় পানির আওতায় ছিল ৮৪ শতাংশ জনগণ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৯৯ শতাংশ জনগণ এর আওতায় এসেছে। স্যানিটাইজেশনের আওতায় ছিল ৭৬ শতাংশ মানুষ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৯৯ শতাংশ জনগণ এ সুবিধার আওতায় এসেছে। গড় আয়ু ৬৬.৮ বছর থেকে ৭২.৬ বছরে উন্নীত হয়েছে। শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৪১ জন, তা নেমে এসেছে ২২ জনে। শিক্ষার হার ৫৪.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৩.৯ শতাংশ হয়েছে। কারিগরি শিক্ষার হার ছিল ২ শতাংশ, তা বেড়ে হয়েছে ১৭ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যারয়ে ভর্তির হার ছিল ৮৭ শতাংশ, তা হয়েছে ৯৮ শতাংশ।
এই বলেই শেষ করতে চাই বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে যখন সমগ্র দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে যে সময়ে এমন একটি সুখবর এলো। বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিক বিশ্বাস করে শেখ হাসিনার মতো এমন যোগ্য দক্ষ দেশপ্রেমিক একজন প্রধানমন্ত্রী থাকলে শত ষড়যন্ত্র করেও বাংলাদেশের অগ্রগতি কেউ আটকাতে পারবে না।
লেখক: কবি-কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও গবেষক
মন্তব্য করুন