পঞ্চগড় প্রতিনিধি খাদেমুল ইসলাম-
তাপমাত্রা ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এতে তীব্র হাড় কাঁপানোশীত পড়েছে সাথে বৃষ্টির মত হিমেল হাওয়া । কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে ভ্যানে চড়তে চায় না জনসাধারন। শীত দূর্ভোগে নিজেদের কষ্টের কথা বলছিলেন হতদরিদ্র দিনমুজুর
আলী হাসান, আবুল কালামসহ কয়েকজন ভ্যান চালক। লাগাতার শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন তারা। তাদের মতো আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনে জীবন কাটছে সময় কাটছে জনসাধারনমানুষগুলোর।
দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ায় জানুয়ারী জুড়েই চলছে প্রকট শীত। দুর্ভোগে গৃহপালিত জীবজন্তুরা। তাপমাত্রা উঠানামা ও টানা ঘন কুয়াশার কারণে পাল্লা দিয়েছে মানুষের নানান শীতজনিত রোগ ও কৃষি ফসলের উপর।
মঙ্গলবার ১৬ জানুয়ারীসকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সোমবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্যটি জানান জেলার প্রথম শ্রেনির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রাসেল শাহ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই মেঘ-কুয়াশায় আবৃত এ জেলা। বৃষ্টির মতো ঝরছে শীত হিমেল শিশির। হিমেল বাতাসে ঝরাচ্ছে শীতের ঝঞ্জা। রাতভর ঝরে কুয়াশার সাথে হিমেল বরফ শিশির। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন শ্রেনীর শ্রমিক থেকে শুরু করে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। প্রয়োজন ছাড়া কেউ
ঘর থেকে বাহির হচ্ছে না।
মানুষজন বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন তারা দিনমুজুর শ্রমিকরা।
এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের পেশাজীবির মধ্যে কৃষি, পাথর-চা শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান চালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রমজীবীরা বিপাকে পড়েছেন। শীতের কারণে কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। বিপাকে পড়েছেন কৃষক চাষিরাও। তারাও ঠান্ডার প্রকোপের কারণে খেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। বীজতলা কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মিলছে না প্রয়োজনীয় গরম কাপড় কাপড়। রাস্তায় চলা ভবঘুরে মানুষরাও পড়েছে শীত দূর্ভোগে।পঞ্চগড় জেলার শহরের হাটবাজার ও গ্রাম এলাকাগুলোতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
পাথর শ্রমিক, দিনমজুর ও ভ্যানচালকরা জানান, প্রচন্ড শীত। ঘন কুয়াশার মধ্যে জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে হচ্ছে। শীতের কারণে কাজ কামও কমে গেছে। কাজ করলে পেটে ভাত জুটে। পেটের ক্ষিধে তো ঠান্ডা বুঝে না। এমনিতে আয় রোজগার কম, তার মধ্যে শীতের তীব্রতা। এসব দূর্ভোগের কারণে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
শীতের কারণে কৃষি আবাদে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। জনজীবনের দূর্ভোগের সাথে চরম বিপাকে পড়েছে আলু চাষিরা। তীব্র শীতের কারণে ক্ষেতের আলুতে ছত্রাকের আক্রমণ বেড়েছে। পাতা কুকড়ে যাচ্ছে। অতি মাত্রায় শীতের কারণে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর্লি বøাইট দেখা দেয়ায় ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাষিরা বলছেন, সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে ২-১ দিন অন্তর অন্তর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে শীতের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।
জেলার প্রথম শ্রেনির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন এ জনপদ। ঘন কুয়াশার কারণে দেখা মিলছে না সূর্য। তবে গতকাল বেলা ১১টার পর দেখা গিয়েছিল সূর্য। তাপমাত্রাও ছিল বেশ। কুয়াশা আর উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বিকেলে সূর্য দেখা গেলেও সে রোদে ছিল না উষ্ণতা। বিকেল থেকেই আবার হিমেল বাতাস বইছে।
মন্তব্য করুন