মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
বাংলাদেশ থেকে ইসলামিক রাজনীতি নির্মূল করা যেমন সম্ভব নয় অন্যদিকে সেকুলার রাজনীতিকেও নির্মূল করা সম্ভব নয়। নির্মূল কেউ কাউকে করতে পারবেন না তবে নির্মূলের চেষ্টা চলতে থাকলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
আওয়ামীলীগ-বিএনপি’র অর্ধেকেরও বেশি তথা লাখো-কোটি কর্মী-সমর্থক ইসলামিক কোনো দলকে ভোট না দিলেও কোনো না কোনো ইসলামিক দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যেও ইসলামিক দলগুলোর সেন্টিমেন্ট কাজ করে।
দেশের জনসংখ্যার ৮০% এর অধিক কোনো না কোনো ইসলামিক দলকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করলেও ভোটের সময় তাদের সিংহভাগ সেকুলার রাজনৈতিক দলকেই ভোট দিয়ে থাকেন।
সেকুলার ও ইসলামিক দলের কর্মী সমর্থকরা একে অন্যের সাথে নানাবিধভাবে সম্পর্কিত। একই ঘরে এক ভাই সেকুলার রাজনীতি আবার অন্য ভাই ইসলামি রাজনীতি করছে। অতএব কেউ কাউকে মাইনাস করতে পারবে না। মাইনাস করা সম্ভব নয়।
সামাজিকতা, আন্তর্জাতিকতা, কৌশল ইত্যাদিতে সেকুলাররা এগিয়ে আছেন বলেই তারা তাদের মতের লোকদের ভোটসহ ইসলামপন্থীদের ব্যাপক ভোট পেয়ে জিতে আসছে। ইসলামিক দলগুলো সেকুলারদের মতো সুবিধাজনক অবস্থায় আগামী বিশ বছরেও আসতে পারবে না। কোনো কারণে ইসলামীক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে জিতে আসলেও ক্ষমতায় বসতে পারবে না। ক্ষমতায় বসলেও মিশরের মতো টিকতে পারবে না কেননা বাংলাদেশের সব সেক্টরে আওয়ামীলীগ-বিএনপির যেরকম শক্ত ভিত রয়েছে -সেরকম ভিত ইসলামীক দলগুলোর নেই।তাছাড়া বর্তমান বিশ্বায়নের এই যুগে বহির্বিশ্বের কিছু দেশের সাথে সুসম্পর্ক থাকা খুবই জরুরি। সেকুলার কোনো দল যত তাড়াতাড়ি সম্পর্ক তৈরি করতে পারে, ইসলামিক দলগুলো তত তাড়াতাড়ি পারে না। তাছাড়া বাংলাদেশের ইসলামীক দলগুলো সম্পর্কে খুবই নেগেটিভ প্রচারণা বহির্বিশ্বে বছরের পর বছর চালানোর ফলে বাংলাদেশের ইসলামীক দলগুলোকে বহির্বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ সন্দেহের চোখে দেখে। আওয়ামীলীগ সরকার ইসলামপন্থী দলগুলোর উত্থানকে বড় করে দেখিয়ে এবং তাদের দমনে আওয়ামীলীগের বিকল্প নেই – সে রকম বেশ কিছু কর্মকান্ড করে ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনকে বিদেশিদের কাছে অনেকটা জায়েজ প্রমাণ করে।
১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতকে আতংক মনে করে ভারত বরাবরই আওয়ামীলীগকে টিকে থাকার সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। অন্যদিকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামীলীগও ভারতকে আজীবন মনে রাখার মতো সুবিধা দিয়ে দেয়।
বিএনপি -জামায়াত দৃঢ়ভাবে মনে করে যে আওয়ামীলীগ ভারতের সমর্থন না পেলে এতোগুলো বছর কোনো অবস্থাতেই টিকতে পারতো না। ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থন না থাকলে সেনাবাহিনীসহ সব ক্ষেত্রে নিরংকুশ আধিপত্য আওয়ামীলীগ তৈরি করতে পারতো না। একটা শক্তিশালী শ্রেণি আওয়ামীলীগ তৈরি করে ফেলায় -এখন ভারতের সমর্থন না পেলেও আওয়ামীলীগ আরো অনেক বছর টিকে থাকতে পারবে। আমেরিকা উঠেপড়ে না লাগলে আওয়ামীলীগের তেমন সমস্যা হতো না৷ আমেরিকা আওয়ামীলীগের দূর্বল দিকগুলোকে আমলে এনে সেসব সংশোধনের জন্য বারবার তাগাদা দিয়ে আসছে। অন্যদিকে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে আওয়ামীলীগ কোনো অবস্থাতেই দূর্বল দিকগুলো সংশোধন করবে না৷ সংশোধন করলে ক্ষমতা যে আর থাকে না। কিন্তু আওয়ামীলীগ অবৈধভাবে ক্ষমতা প্রলম্বিত করলে এক পর্যায়ে আমেরিকা চূড়ান্ত অবরোধ দিয়ে দিবে-আর তাতে দেশের অর্থনীতি তছনছ হয়ে যাবে তখন সাধারণ জনগণও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে বারবার আন্দোলন করবে আর সরকার বরাবরের ন্যায় দমিয়ে দিবে।
প্রেসিডেন্ট, বিচারকরা ইমরান খানের পক্ষে এবং ৭০% এর অধিক জনগণ নিয়ে আন্দোলন করলেও ইমরান খান এর আন্দোলনকে সহজেই এস্টাবলিশমেন্টের মাধ্যমে দমিয়ে যেভাবে দেওয়া হয় ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের সব আন্দোলনকে বর্তমান সরকার দমিয়ে দিবে। তাছাড়া ভারত আমেরিকার কারণে আগের মতো আওয়ামীলীগকে সমর্থন না করলেও স্বার্থের কারণে গোপনে সহযোগিতা করে যাবে, বিরোধিতা তো কখনো করবে না। আর তাই দেশ পঙ্গু হয়ে গেলেও আওয়ামীলীগের টিকে থাকতে সমস্যা হবে না। দমন-পীড়ন দীর্ঘ পনেরো বছর আওয়ামীলীগ যেভাবে করে আসছে-টিকে থাকার স্বার্থে তার থেকে বেশি করবে ।
“দেশ পঙ্গু হলে হয়ে যাক কিন্তু আমরা ক্ষমতায় থাকবো”-আওয়ামীলীগ এরকম মনোভাব পোষণ করে থাকলে তারা এস্টাবলিশমেন্টের সহযোগিতায় আরো অনেক বছর টিকে থাকতে পারবে। তবে বিএনপি-জামায়াত ব্যতীত নির্ভরযোগ্য কোনো দল দ্বারা আওয়ামীলীগ যদি নিরাপত্তার গ্যারান্টি পায় এবং সে দল জিতে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে দেশের ক্ষতি না করে আওয়ামীলীগ ফেয়ার ইলেকশন দিবে অন্যথা ফেয়ার ইলেকশন কোনো অবস্থাতেই দিবে না।
অন্যদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত হয় আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকুক নতুবা বিএনপি-জামায়াত ব্যতীত অন্য কেউ ক্ষমতায় আসুক-সেটা চাইবে৷ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকলে আওয়ামীলীগ ও ভারত তাদের নিজ নিজ স্বার্থের কারণে যৌথভাবে বিএনপি-জামায়াতকে ঠেকাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বিএনপি থেকে জামায়াতকে পৃথক করা হয়। জামায়াত অন্যান্য ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐক্য করে চেষ্টা চালালে তাতে “বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান” এরকম প্রচারণা বহির্বিশ্বে চালানো হবে। ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ আমেরিকা কর্তৃক বাংলাদেশে ড্রোন হামলা হতে পারে বলে যে মন্তব্য করেছেন -সে মন্তব্য বাস্তবে রুপ নিবে। আর তাই ইসলামিক দলগুলোর ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও দেশের স্বার্থে তাদের উচিত হবে-দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা, ধৈর্য ধরা, ছাড় দেওয়া। অন্যদিকে বিএনপিসহ সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলোকেও ধৈর্য ধরতে হবে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ছাড় দিতে হবে।
আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও ইসলামিক দল তথা সবার জন্য একটা ভীতিমুক্ত ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে ছাড় দিয়ে এক যোগে কাজ করে ভীতিমুক্ত ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামায়াত তারা তাদের স্ব স্ব নেতৃত্ব ছাড় দিয়ে তৃতীয় মধ্যপন্থী একটি দলকে জিতিয়ে আনতে পারলে সবার জন্য ভীতিমুক্ত ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
তৃতীয় একটি শক্তির উত্থানে অনেকে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ বিদেশিদের সহযোগিতায় চেষ্টা চালাচ্ছেন। যারা বিদেশিদের সহযোগিতায় চেষ্টা চালাচ্ছেন -তারা দেশপ্রেমহীন কুলাঙ্গার। প্রকৃত দেশপ্রেমিক তৃতীয় শক্তিকে চিনতে হলে ফর্মূলা দিয়ে চিনতে হবে। তৃতীয় শক্তির ফর্মূলাটা এমন হতে হবে-যাতে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ মাইনাস না থাকে এবং কারো দূর্নীতি করার সুযোগ যাতে না থাকে। তৃতীয় ধারার ফর্মূলা দেখলেই যে কেউ বুঝে নিতে পারবেন যে, আসলে তৃতীয় ধারাটি ফেক না রিয়েল।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটসহ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি এমন একটি ফর্মূলা তৈরি করেছে-যা অনুসরণ করা হলে আওয়ামীলীগ-বিএনপি-ইসলামিক দলগুলো তথা পুরো দেশবাসী পুরোপুরি রক্ষা পেয়ে দেশ ছাড়খার হওয়া থেকে বেঁচে যাবে, সবার জন্য ভীতিমুক্ত ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তখন আমেরিকা, ভারত কিংবা অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নেগেটিভ প্রচারণা চালানোর সুযোগ পাবে না। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। আর তাই বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ফর্মূলা বাস্তবায়নে আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামায়াত ও জাতীয় পার্টির মধ্যে থাকা দেশের সৎ রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
প্রতিষ্ঠাতা
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি
মন্তব্য করুন