মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
আমরা মানুষদের মধ্যে অনেকেই ছোট-খাটো বিপদে পড়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলি, উত্তরণের চেষ্টা না করে নিজেকে খারাপ পরিস্থিতির নিকট সঁপে দেই-যা কাপুরষতার লক্ষণ।
ঈগল শক্তিশালী ও দক্ষ শিকারি পাখি। একটি সুস্থ ঈগল ১১ হাজার ফুট উপরে উঠে উড়তে পারে। ঈগল সাধারণত বনে জঙ্গলে বসবাস করে। বানর, বিভিন্ন ধরনের পাখি, টিকটিকি, সাপ ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে।
এই পাখি জনমানবহীন এলাকায় গাছে ১০০ ফুট উপরে বাসা তৈরি করে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একত্রে বসবাস করে বংশবৃদ্ধি ঘটায়।
একটি প্রাপ্তবয়স্ক ঈগলের ওজন প্রায় ৩০ কেজি এবং দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০-৩৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। শীতকালে এরা তুলনামুলক উষ্ণ অঞ্চলে চলে যায়। ঈগলের জীবন রক্ষার জন্য বড় অস্ত্র হচ্ছে তাদের পায়ের নখ। নখগুলো এতই ধারালো যে নিমিষের মধ্যে শিকারকে কাবু করে ফেলে।
পাখ-পাখালির মধ্যে ঈগল পাখির জীবন প্রক্রিয়া অন্য পাখিদের তুলনায় ভিন্ন। প্রায় ৪০ বছর বয়সে তাদের শরীরে স্বাভাবিক জীবন যাত্রার অনুকূল অবস্থা আর থাকে না। বয়স যখন ৪০ হয় তখন শারীরিক প্রতিকূল অবস্থার কারণে জীবনটা মারাত্মক কষ্টের হয়ে দাঁড়ায় সব ঈগলের। যখন একটা ঈগল পাখি ৪০ বছরে পোঁছায় তখন ঈগল পাখি ঠিক মত শিকার করতে পারে না কারণ ঐ সময়টাতে ঈগলের ঠোঁট অনেক ভারি, মোটা আর ভোঁতা হয়ে যায়- যার জন্য ঠোঁট দিয়ে ঠিক মতো শিকারকে আক্রমন করতে পারে না। পুরাতন পাখা ও পালকগুলো ভারি হয়ে উড়তে সমস্যা হয়ে যায়। ঠিক মতো উড়তে পারে না। পায়ের নখগুলো অনেক বড় হয়ে বেঁকে যায়। কিছুটা গোল আকৃতি ধারণ করার ফলে নখ দিয়ে শিকার ধরতে পারে না। এসব কারণে ঐ অবস্থায় বেঁচে থাকাটা অনেক কষ্টের হয়ে যায়। এই অবস্থাতে অনেক ঈগল মারা যায়। ধৈর্য, চরম কষ্ট ও সাহস করে নিজের ঠোঁট গাছের সাথে আঘাতের পর আঘাত করে যেসব ঈগল উপড়ে ফেলার কাজটি করতে পারবে সেসব ঈগল ৪০ বছরে মারা না গিয়ে ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। হায়াতকে দীর্ঘায়িত করার জন্য এসব ঈগল উচু পাহাড়ের চুঁড়াতে অবস্থান করে নিজের ঠোঁটকে শক্ত গাছের সাথে আঘাত করতে করতে ঠোঁটটাকে উপড়ে ফেলে। অপেক্ষা করে নতুন ঠোঁট গজানোর। একটা নতুন ঠোঁট গজাতে প্রায় ৩ মাস সময় নেয় ।
এ সময়ে ঈগল পাখি কোনো খাবার গ্রহন করে না। এমনকি পানি পর্যন্ত পান করে না। তিন মাসের মধ্যে যখন নতুন ঠোঁট পূনরায় উঠে তখন নতুন ধারালো ঠোঁট দিয়ে পায়ের নখগুলো উপড়ে ফেলে। পাখার পালকগুলো তোলে ফেলে। উপরোক্ত কাজগুলো করতে অনেক ধৈর্য ও কষ্ট স্বীকার করতে হয়। এভাবে কষ্ট করে তা সম্পন্ন করে আরো ১ মাস অপেক্ষা করে নতুন নখ ও পাখা গজানোর জন্য। আবার যখন নতুন পাখা , নখ ফিরে পায় তখন ঈগল আবার শিকারে বের হয়। এই প্রক্রিয়াটা প্রায় ৪ মাস ধরে চলতে থাকে। যেসব ঈগল চারমাসের চক্রটি সফলভাবে করতে পারে সেসব ঈগলই ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচা সব ঈগলকে উপরোক্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাঁচতে হয়।
আমরা মানুষদের মধ্যে অনেকেই ছোট-খাটো বিপদে পড়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলি, উত্তরণের চেষ্টা না করে নিজেকে খারাপ পরিস্থিতির নিকট সঁপে দেই-যা কাপুরষতার লক্ষ্মণ। হতাশ হয়ে থেমে না থেকে মানসিক দৃঢ়তার সহিত ধৈর্য ও ত্যাগ স্বীকার করে এগিয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে জীবন। যতোক্ষণ শ্বাস, ততোক্ষণ আশ, ততোক্ষণ চেষ্টা, ততোক্ষণ সংগ্রাম। থেমে যাওয়া জীবন নয়। জীবনে চলার পথে প্রতিবন্ধকতা থাকবে/আসবে-তা মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হয়। Sirvival is the fittest. প্রতিকূল অবস্থায় যিনি টিকে থাকতে পারবেন-টিকে থাকার অধিকার কেবল তারই। ঈগল পাখির অনেক ধৈর্য ও কষ্ট স্বীকার করে প্রতিকূলতাকে জয় করা থেকে আমরা মানুষরা শিক্ষা নিতে পারি।
লেখক
সহ-সভাপতি
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি
চট্টগ্রাম মহানগর শাখা
মন্তব্য করুন