আব্দুল কুদ্দুস, কুলাউড়া:
কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের শিংরাউলী বিল বোরো ধান চাষে এখন বিখ্যাত। নদী তীরবর্তী হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা আউস, আমনের চেয়ে বোরো ক্ষেতের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। গত কয়েক বছর থেকে এখানে বোরোর বাম্পার ফলন হচ্ছে। এক সময় শুষ্ক মৌসুমে বিলে প্রচুর পানি আটকিয়ে রাখা যেত। পরবর্তীতে মনুনদীর ভাঙ্গণে পলি দ্বারা বিল ভরাট হয়ে যায়। ফলে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই এখন বিলের পানি শুকিয়ে যায়। তারপরও প্রকৃতির উপর নির্ভর না থেকে সেচের মাধ্যমে বোরো আবাদের আওতায় আনা হয়। নদী তীরবর্তী এই বিলে আউশ ও আমন ধান চাষে কৃষকদের তেমন আগ্রহ থাকেনা। ফলে শুকনো মৌসুম এলেই পুরো বিল বোরো চাষের আওতায় আনা হয়। আসন্ন বোরো মৌসুমে সেচ পাম্প ও পানির চাহিদাও আগের চেয়ে বেড়ে যাবে। এই চাহিদা পূর্ণ না হলে বোরো’র বাম্পার ফলনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
খোজঁ নিয়ে জানা যায়, শিংরাউলী বিলে ২০০৬ সাল থেকে ডিজেল চালিত পাম্প দিয়ে সেচের মাধ্যমে বোরো চাষ হচ্ছে। ২০০৯ সালে বিএডিসির আওতায় সেচ প্রকল্প শুরু হয়। প্রথমে ডিজেল চালিত পাম্প দিয়ে সেচ প্রকল্পের কাজ চলে। পরবর্তীতে ২০১২ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বিএডিসির মাধ্যমে ৫ কিউসেক বৈদ্যুতিক পাম্প বরাদ্দ দেন। তাছাড়া তাজপুর সেচ প্রকল্পের আওতায় তাজপুরস্থ মনুনদীর তীরে ১ কিঃমিঃ বারিড পাইপ দিয়ে ভুগর্ভস্থ্য নালা তৈরী করা হয়। এই পাম্পের সর্বোচ্চ ১৫০ একর জমিতে পানি সেচের ধারণ ক্ষমতা ছিল। পর্যায়ক্রমে কৃষকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে এক হাজার একর জায়গায় বোরো আবাদ হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, তাজপুর সেচ প্রকল্পের আওতায় বিএডিসির একটি ভিত্তি বীজ উৎপাদন প্রকল্প রয়েছে এই বিলে। কিন্তু আসন্ন মৌসুমে ৫ কিউসেক পাম্প দিয়ে হাজার একর জায়গায় পানি সেচ দেওয়া সম্ভব হবেনা।
তাজপুর সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার শ্রীকান্ত দে জানান, ২০১২ সালে বিএডিসির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সরজমিন পরিদর্শনসহ তাজপুর গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের পাশে পাম্প স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়। একই এলাকার দীপ্তি দাস জায়গার মালিলকানা দাবী করে পাম্পটি অন্যত্র সরাতে ২০১৪ সালে আদালতে মামলা করেন। এমনকি ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে তিনি পাম্পের স্থাপনা গুড়িয়ে দেন। ঘটনাটি সাথে সাথে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে সেচ পাম্পটি অন্যত্র সরানো হলে বর্তমানে ওই জায়গাটিও নদীগর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে। বোরো চাষের মৌসুমও আসন্ন। পাম্প স্থাপনের জায়গা না পাওয়ায় কৃষকরা শঙ্কায় রয়েছেন। তাছাড়া বর্তমানে ৫ কিউসেক পাম্প দিয়ে সেচের কাজ চলছে। আবাদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পানিরর চাহিদাও বেড়ে গেছে। এখন ১০ কিউসেকের পাম্প প্রয়োজন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী থাকবেনা। কৃষকদের উৎসাহিত করতে সরকার প্রণোদনার ব্যবস্থা করছে। কৃষকদের পাশে সরকার সবসময় রয়েছে। বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণেও সরকার কৃষকদের ভুর্তুকি দিচ্ছে। ###
মন্তব্য করুন