ডেস্ক রিপোর্ট। দি সিলেট পোস্ট।
বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের শিল্প খাতে। সার্বিকভাবে শিল্প উৎপাদনের হার কমে গেছে।
এক বছর ধরেই প্রতি ত্রৈমাসিকে শিল্পোৎপাদনের হার কমে যাচ্ছে। গত বছরের মার্চ থেকে জুন-এই ত্রৈমাসিকে শিল্প উৎপাদন রেকর্ড হারে বেড়েছিল ৪৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে তা কমে ১১ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এপ্রিলেও এ হার কমেছে। এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকেও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও এ হার কমতে পারে।
সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয়ও মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। যেভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে, ওই হারে রপ্তানি আয় বাড়েনি। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে যায়। এসব মিলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে সরকার আমদানি কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে এলসি মার্জিন আরোপ, পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক বা রেগুলেটরি শুল্ক আরোপ, আমদানিতে ডলারের জোগান না দেওয়া, ব্যাংকগুলোর এলসি খুলতে অনাগ্রহ প্রকাশ ও সরকারি খাতের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর প্রভাবে শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, তৈরি পণ্য ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি কমে যায়। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর শিল্প উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়েছে। এর আগে করোনার প্রভাবে গত বছরের আগস্ট থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় শিল্প খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যে কারণে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক থেকেই শিল্প উৎপাদন কমতে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২৩টি উপখাতের মধ্যে ১২টি উপখাতে শিল্প উৎপাদন কমেছে। বেড়েছে ১১টি উপখাতে। প্রধান প্রধান শিল্প উপখাতেই পণ্যের উৎপাদন কমেছে। এর প্রভাবে সার্বিকভাবে শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে।
গত বছরের মার্চ থেকে জুন প্রান্তিকে শিল্প উৎপাদন বেড়েছিল ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-এই তিন মাসে শিল্প উৎপাদন বেড়েছিল ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বেড়েছিল ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের জুনের পর থেকে প্রতি প্রান্তিকে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমছে। এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকের মধ্যে কেবল এপ্রিলের তথ্য পাওয়া গেছে। ওই মাসে শিল্প উৎপাদন বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও শিল্প উৎপাদন কমে যাবে। কারণ বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোর প্রভাব এখন আরও বেশি করে পড়বে। এছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয়ও অর্থনৈতিক মন্দা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ওইসব দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এতে তারা অর্থের প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে, যা অর্থনীতিকে আরও মন্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, বিশ্বব্যাপী যে মন্দা চলছে তার প্রভাবে দেশের রপ্তানি কমে যাবে-এটাই স্বাভাবিক। এই সময়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে হবে। তা না হলে শিল্প খাতে আরও মন্দা দেখা দেবে।
তিনি আরও বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং ডলারের সংকট-এ দুটি কারণে শিল্পের উপকরণ আমদানি কমেছে। এতে শিল্প খাতের উৎপাদনও কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের ১৫ শতাংশ, তামাকজাতীয় পণ্যের ১২ শতাংশ, টেক্সটাইল পণ্যের ১১ শতাংশ, চামড়াজাতীয় পণ্যের ১৪ শতাংশ, প্রিন্টিং জাতীয় পণ্যের ৪ শতাংশ, পেট্রোলিয়াম থেকে পরিশোধিত পণ্য উৎপাদন ১৭ শতাংশ, ওষুধ ৫ শতাংশ, ফেব্রিকেট মেটাল ৩ শতাংশ, কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক পণ্য ৭ শতাংশ, পরিবহণ উপকরণ ৪৩ শতাংশ ও ফার্নিচার জাতীয় পণ্যের উৎপাদন কমেছে ১ শতাংশ।
শিল্প উৎপাদন বেড়েছে কোমল পানীয় ৬৫ শতাংশ, বিভিন্ন ধরনের পোশাক ৩০ শতাংশ, কাঠ ও কাঠ জাতীয় পণ্য ৩ শতাংশ, পেপার ও পেপার জাতীয় পণ্য ৮৫ শতাংশ, রাসায়নিক ও জাতীয় রাসায়নিক পণ্য ১২ শতাংশ, রাবার ও প্লাস্টিক পণ্য ৩১ শতাংশ, বেসিক মেটাল ১৪ শতাংশ, ইলেকট্রিক্যাল সামগ্রী ১৩ শতাংশ, মেশিনারি ২ শতাংশ ও মোটর ভেহিক্যাল জাতীয় পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে ২৪৬ শতাংশ।
মন্তব্য করুন