মাহবুবুল আলম
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্বের প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় তাঁর অবস্থান দুই নম্বরে। বিশ্বে তার উন্নয়ন দর্শন আজ অনুকরণীয়, সমাদৃত অনুসরণীয়।
শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে দেশ স্বাধীনতার পর কোনো সরকারের আমলেই এত উন্নয়ন হয়নি।
খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, মূল্যবোধ, কৃষি, অর্থনীতি, রেমিটেন্স, বিদ্যুৎ, বৈদেশিক সম্পর্কের উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশবাসীকে যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু আর্থিক বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, দেশ থেকে জঙ্গীবাদ দমনে অনেকটাই সফল হয়েছেন তিনি।
খুন, নারী নির্যাতন, গুম, কোভিডে মৃত্যু, ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম ইত্যাদি নানা নেতিবাচক খবরের ভিড়ে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো একটা খবর। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বের যে তিনটি দেশ সবচেয়ে এগিয়ে আছে, এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৫ জুন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ – যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
অনেক বাধা-বিপত্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু- কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে আছে। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।”
সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান।
আশা করা হচ্ছে এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র বিমোচন হবে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছেন শেখ হাসিনার সরকার। দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে দুই শতাধিক সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় অথবা নির্মাণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর নড়াইলের লোহাগড়ার কালনা পয়েন্টে নির্মিত দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন মধুমতি সেতুর দ্বার খুলেছে গতকাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ অক্টোবর ২০২২ দুপুরে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সেতু উদ্বোধনের পর ভীষণ উচ্ছ্বাসিত দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ। বাঁধভাঙা আনন্দ উল্লাসে মেতেছে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বহুল প্রত্যাশিত এ সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সেতু চালুর মধ্য দিয়ে খুলনা তথা দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। এ সেতুর কল্যাণে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। আশা করা হচ্ছে উদ্যোক্তারা এ অঞ্চলে বিপুল বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে গত ২০০৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’ নামকরণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে কালনা সেতুর নাম পরিবর্তন করে নদীর নামে ‘মধুমতি সেতু’ নামকরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার হবে কালনাঘাটের মধুমতি সেতু। এ সেতুর পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা শংকরপাশা ও পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা। শংকরপাশা গোপালগগঞ্জ জেলা সীমান্তের গ্রাম। আর কালনা নড়াইল জেলা সীমান্তের গ্রাম। দুই জেলার সীমান্তে নির্মিত সেতুটি ঢাকার সঙ্গে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করে দিয়েছে।
মধুমতি সেতু চালু হওয়ায় শুধু জাতীয় ক্ষেত্রে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ভারতের কলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। মধুমতি সেতু চালুর ফলে বেনাপোল স্থলবন্দর, মোংলা সমুদ্রবন্দর ও নওয়াপাড়া নদী বন্দরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বাড়বে। যোগাযোগ, পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন, এমনকি পর্যটনে আসবে গতি, যা থেকে তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, কমবে দারিদ্র্য। অর্থনীতির পালে লাগবে নতুন হাওয়া। একইসঙ্গে এ সেতুর কারণে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও কমিয়ে দেবে। মোংলা সমুদ্র বন্দর ও নোয়াপাড়া নদী বন্দরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বাড়বে। এতে এ অঞ্চলের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও বহু কাঙ্ক্ষিত মধুমতি সেতু চালু হওয়ায় আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভাসছে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ। সেতুটি চালুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের সড়ক পথের দূরত্ব ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমে যাবে। ঢাকার সঙ্গে সহজ যাতায়াত প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাড়বে শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ। গতি পাবে নগরায়ণ। কৃষিতে আসবে নতুন বিপ্লব। বাড়বে কর্মসংস্থান। বিকশিত হবে পর্যটন।
মধুমতি সেতুর ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইলের ৮৬ কিলোমিটার পথের দূরত্ব কমলো। কালনা সেতু থেকে মনিহার সিনেমা হল পর্যন্ত ১৮ ফুটের রাস্তা ২৪ ফুটের রাস্তা করা ওয়ার্ক ওর্ডার হয়ে গেছে। ঠিকাদার নিয়োগও হয়ে গেছে। খুব দ্রুত এ রাস্তাটি আমরা ৬ লেনে উন্নীত করবো।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র বিকাশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম ও অতুলনীয়া। তাঁর দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। তাঁর সাহসিকতা এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেছে।
বাংলাদেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০২১ বাস্বায়ন ও ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও এর বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। জনগণ ও দেশের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গৃহিত সকল যুগান্তকারী কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে দেশের ইতিহাসে তাঁর শাসনামল চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করুন