ডেস্ক রিপোর্ট। দি সিলেট পোস্ট।
২০১২ সালের ৩ জুলাই গণভবনে গিয়েছিলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চা শ্রমিক জোৎসা কালিন্দি, শুকুয়ারা কর্মকার, গীতা পাত্র, রিপা পাত্র, চিলা উরাং, ভারতী রায়, অবিরত বাকতি, গোপী তাতী, ক্রীপাময় তন্তবায়, অনিরুদ্ধ বাড়াইক, শ্যামল মহালি, যুবরাজ ঝড়া ও মনিশংকর বাউড়ীসহ ১৬ জন চা শ্রমিক। এতে নেতৃত্ব দেন চান্দপুর চা বাগানের স্বপন সাওতাল ও কাঞ্চন পাত্র।
তারা সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা শ্রমিকদের নানা সমস্যার কথা ভাগাভাগি করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি স্বর্ণের বালা উপহার দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময়ে বালা উপহার নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, আপনারা গণভবনে এসেছিলেন, আমার জন্য উপহারও নিয়ে এসেছিলেন।
হাতের বালা দুটি দেখিয়ে তিনি বলেন, এই উপহার আমি হাতে পরে বসে আছি, আমি এটা ভুলিনি, আমার কাছে এটি সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ। কারণ আমার চা শ্রমিক ভাইয়েরা বোনেরা চার আনা, আট আনা পয়সা জমিয়ে আমাকে উপহারটা দিয়েছে, আমার জন্য এটা এত বড় সম্মান, আমি এত বড় সম্মান জীবনেও পাইনি, এজন্য এটা আমি সব সময় হাতে রাখি।
প্রধানমন্ত্রীর এমন আবেগঘন স্মৃতিচারণে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন চা শ্রমিকরা। কিন্তু এমন আবেগআপ্লুত চা শ্রমিকরা সেদিনের কথা মনে করে কিছুটা কষ্টও পান। কারণ সেদিন যারা গণভবনে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জোৎসা কালিন্দি ও শুকুয়ারা কর্মকার আর বেঁচে নেই। মাত্র কয়েক মাস আগে দুই মাসের ব্যবধানে তারা মারা যান। কিন্তু তারা মারা যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর এমন আবেগঘন কথা শুনলে এবং চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আজ পূরণ হচ্ছে জানলে তারা খুব খুশি হতেন।
এসব কথা জানান গণভবনে যাওয়া চা শ্রমিক নেতা স্বপন সাঁওতাল ও কাঞ্চন পাত্র। তিনি বলেন, আমরা সেদিন বালা উপহার দেওয়ায় তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। আজ ১০ বছর পরও প্রধানমন্ত্রী বালা দুটি পরে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, হাত তুলে বালা দেখিয়েছেন এবং সেদিনের স্মৃতিচারণ করেছেন, এটা যে আমাদের চা শ্রমিকদের কত ভাল লেগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
কাঞ্চন পাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন দেওয়াসহ অনেক দাবি দাওয়া করেছিলাম। এর পরপরই তিনি চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন করার নির্দেশনা দেন এবং নির্বাচনের সব খরচ তিনি দিয়েছিলেন। শনিবার তিনি আমাদের সাথে মতবিনিময় করে আমাদের দাবি ধাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আজ জোৎসা কালিন্দি ও শুকুয়ারা তন্তবায় বেঁচে থাকলে অবশ্যই কত খুশি হতেন।
এ বিষয়ে গীতা পাত্র বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও আমাদের মা প্রধানমন্ত্রী দাবিগুলো পূরণ করছেন জেনে আমরা অনেক খুশি। কিন্তু জোৎসা কালিন্দি ও শুকুয়ারা বেঁচে থাকলে তারা অনেক খুশি হতেন।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগান খেলা মাঠে শনিবার বিকালে জেলার ৪১টি চা বাগানের প্রায় ৫ হাজার চা শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে কথা বলেন। এ সময় চা বাগানের দুজন নারী চা শ্রমিক সুমনা নায়েক ও বিজলা কানু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভূমির অধিকার প্রদান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান দেওয়াসহ বিভিন্ন ভাতা বাড়ানোর দাবি জানান।
চা শ্রমিক সুমনা নায়েক চা শ্রমিকদের ভোটার করে এদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং চা শ্রমিকদের নানা সুবিধা প্রদান করায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
মন্তব্য করুন