ডেস্ক রিপোর্ট। দি সিলেট পোস্ট।
দেশে আকস্মিক জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে মুমূর্ষু রোগী পরিবহণে ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াতেও। অকটেন ও ডিজেলের দাম বাড়ায় অসহায় রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভাড়ায় আদায় করছে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা।
গত দুদিন সরেজমিন রাজধানীর একাধিক হাসপাতাল ঘুরে রোগী, স্বজন, অ্যাম্বুলেন্স মালিক, চালক ও সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। যদিও মালিক সমিতির দাবি তারা ভাড়া বাড়াননি। অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা নীতিমালা না থাকায় কেউ কেউ সুযোগ নিচ্ছেন।
রোববার কিশোরাগঞ্জ থেকে ভাঙা পায়ের ফলোআপ চিকিৎসা নিতে জাতীয় অর্থপেডিক্স প্রতিষ্ঠান ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) আসেন কারি আবুল হাশেম (৮৫)।
চিকিৎসা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি যেতে চাইলে বেশি ভাড়ার কারণে গেটে থমকে যান। বয়োবৃদ্ধ বাবাকে কোলে নিয়ে ছেলে আশরাফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আগে কিশোরগঞ্জ থেকে চার হাজার টাকায় পঙ্গুতে এলেও আজ ছয় হাজার দাবি করছে।
বাধ্য হয়ে সিএনজিতে করে উত্তরায় ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার মনস্থির করেছি। বাবার পা একটু ভালো হলে বাসে গ্রামের বাড়ি ফিরবেন। অ্যাম্বুলেন্স চালক-সহকারীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি করতে দেখা যায় জামালপুরগামী আরেক রোগীর স্বজনদের।
তিনি জানান, অসুস্থ ভাইকে নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরতে চান। অ্যাম্বুলেন্সে জামালপুর সদর যেতে পাঁচ হাজার টাকার ভাড়া সাত হাজার দাবি করছে।
জানতে চাইলে পাপিয়া অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের চালক সুমন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ‘৮৯ টাকা লিটার অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ হয়েছে। পথে খরচ হবে তিন হাজার, চালক-হেলপারের ভাড়া ছাড়াও মালিককে দিতে হবে। তাই আগের হিসাব করলে না খেয়ে মরতে হবে। বাধ্য হয়েই একটু বেশি চাইছি।’
উত্তরবঙ্গ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মালিক আসলাম উদ্দিন জানান, পাবনা থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। তেলের দাম বাড়ার আগে ট্রিপপ্রতি সাড়ে সাত থেকে আট হাজার নিতেন।
দূরপাল্লার পরিবহণ ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ৪০ পয়সা বেড়েছে। অর্থাৎ ৫০০ টাকার ভাড়া ৬১০ হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স সাধারণত ডিজেল, অকটেন ও সিএনজি গ্যাসে চলে।
প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪ ও অকটেনে ৪৬ টাকা করে বেড়েছে। এক লিটার অকটেন ৮ কিলোমিটার ও ৫০০ টাকার সিএনজি গ্যাসে ৯০ কিলোমিটার চলে।
তাছাড়া দুই মাস আগেও পাঁচ লিটার মোবিলের দাম ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা ছিল। বর্তমানে ২৫০০ করে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে চালক-সহকারীর থাকা খাওয়া, মাসিক বেতন ও ওভারটাইমের খরচ দিতে হয় মালিককে।
চাকা মেরামত, এয়ার, মোবিল, এসি, অক্সিজেন ফিল্টারসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ মাসে আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার। ফলে অনেকে বেশি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে বরিশালগামী কয়েকজন চালক জানান, পদ্মা সেতুর আগে ফেরিতে টোল ছিল ৮৫০, সেখানে সেতুতে ১৩০০ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে ২৫০সহ ১৫৫০ টাকা গুনতে হয়।
এভাবে যাতায়াতে ৩১০০ টাকা খরচ হয়। তা ছাড়া বিআরটিএ ছয় সিটের অনুমোদন দিলেও রোগীর সঙ্গে স্বজন থাকায় আট সিট করা হয়। পথে ছোট ব্রিজ টোল, বিভিন্ন পয়েন্ট চাঁদা ছাড়াও ট্রাফিক সার্জেন্ট ও পুলিশকে খুশি করতে হয়।
পঞ্চগড়ের এক চালক বলেন, পঞ্চগড় থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। ঢাকার লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যান পঞ্চগড় গেলে ২২ থেকে ২৩ হাজার নেওয়া হচ্ছে। জ্বালানির দাম বাড়ায় ফ্রিজারে ৫, নরমালে তিন হাজার এবং রংপুর-দিনাজপুরগামী আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা না বাড়ালে এ পেশায় টেকা যাবে না।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কেউ কেউ বেশি ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি।
তবে সমিতি থেকে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তিনি বলেন, দেশে অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায় নীতিমালা নেই। এতে অনেকে খেয়ালখুশি মতো চললেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। বিআরটিএ’র উচিত একটি নীতিমালা করেদেওয়া।
মন্তব্য করুন