ডেস্ক রিপোর্ট। দি সিলেট পোস্ট।
কুলাউড়া উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পুলিশ ও বিজিবি যৌথ টহল জোরদার করেছে। বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া নেতৃত্বে পুলিশ ও বিজিবি যৌথভাবে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে। এ সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১২ মে মৌলভীবাজারে গোয়েন্দা সংস্থা ১৮ রোহিঙ্গাকে আটক করে মৌলভীবাজার মডেল থানায় হস্তান্তর করেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আটক রোহিঙ্গারা জানায়, তারা কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শিকড়িয়া গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এরপর থেকেই তোলপাড় শুরু হয়েছে সর্বমহলে।
হঠাৎ বাড়তি তৎপর হয়ে উঠেছে বিজিবি। নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশও। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করতে সীমান্তবর্তী মুরইছড়া বাজারে প্রচারণা চালায় কুলাউড়া থানা পুলিশ। আর বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে দফায় দফায় করেন বৈঠক।
জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শিকড়িয়া গ্রাম দিয়ে গত এক বছর ধরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। চারটি স্পষ্ট দিয়ে অবৈধভাবে খুব সহজেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এ কাজে জড়িত স্থানীয় একাধিক চোরাকারবারি গ্রুপ। তারা সবাই বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির নারী, শিশু, মানব পাচারকারী ও চোরাকারবারি দলের তালিকাভুক্ত। ভারতীয় পাশের ব্যুরোর ঘর, বাংলাদেশের সর্দারের বাড়ির হ্যাচারির পার, পাগলার বাড়ি ও সেগুন টিলার পাশে- এই চারটি স্পট দিয়ে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের জোন হিসেবে বেছে নিয়ে নিয়েছে চোরাকারবারিরা।
এই চারটি স্পটই ৪৬ বিজিবি আলীনগর বিওপি এবং মুড়ইছড়া বিওপির অধীনস্থ বিওপি দুটি মধ্যবর্তী স্থানে। এসব স্পষ্ট দিয়ে একই কায়দায় মাদক, গরু, কাপড় ও নাসির বিড়ি আনা হয়। বিনিময়ে টাকা ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হচ্ছে ইলিশ মাছ, হাঁস এবং নানা ধরনের মাছ ধরার জাল ও পোনাজাতীয় মাছ।
গত ১১ মে সন্ধ্যায় ভারতের দেবিপুরের ১৮৪২-১৮৫১ নাম্বার সীমানা পিলারের ১৮৪৮ নাম্বার পিলারের পাশ দিয়ে ১৮ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করায়। এর আগেও তারা রোহিঙ্গার বিশাল বিশাল বহর নিয়ে আসে দেশে। গত এক বছর ধরে সপ্তাহে ৪-৫ বার ১৫-২০ জন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে।
২০২১ সালের ১৬ জুলাই (শুক্রবার) ২১ জন রোহিঙ্গা শিকড়িয়া গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানো হয়। এই চক্রের সদস্য কালামের নেতৃত্বে। পরদিন ১৭ জুলাই ভোরে সিএনজিতে করে মৌলভীবাজার নিয়ে শ্রীমঙ্গল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রেখে আসার কিছুসময় পর ৭ শিশু, ৮ নারী ও ৬ জন পুরুষ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। সেসময় রোহিঙ্গারা স্বীকার করে তারা শিকড়িয়া গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় চালান আসে গত ২৯ রমজান। প্রায় ২৫ জনের মতো ছোট-বড় রোহিঙ্গা ছিলেন সেই বহরে। মৌলভীবাজার হয়ে তাদের পাঠানো হয় উখিয়ায়।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন ও টহল করা হয়েছে। রোববার (১৫ মে) দ্বিতীয় দফা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেছে বিজিবি। পুলিশও নজরদারি বাড়িয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ও অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে।
৪৬ বিজিবি শ্রীমঙ্গলের সহকারী পরিচালক মাহফুজ জানান, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভা করেছি। চোরাকারবারিরা যেন অন্ধকার পথ ছেড়ে ভালোর পথে আসে।
বৃহস্পতিবার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে মুরইছড়া বাজারে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের ব্যাপারে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় লোকজনকে অনুরোধ করেন। শুধু রোহিঙ্গা নয় সীমান্ত চোরাচালান বন্ধেও তিনি স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা কামনা করেন।
মন্তব্য করুন