হবিগঞ্জ-১ আসনে প্রবাসীদের দাপট বিএনপির প্রার্থী ১০ জামায়াতের ১


দ্যা সিলেট পোস্ট প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ১০:২১ অপরাহ্ন /
হবিগঞ্জ-১ আসনে প্রবাসীদের দাপট বিএনপির প্রার্থী ১০ জামায়াতের ১

নুরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে ॥

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন’কে সামনে রেখে নবীগঞ্জ-বাহুবল এলাকায় সরব হয়ে উঠেছে। সবর্ত্র নির্বাচনী আলোচনা শুরু হয়েছে। কে হবেন কোন দলের প্রার্থী এই নিয়ে ভোটদের মধ্যে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ চলছে। বিশেষ করে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের মধ্যে কে কোন দলের প্রার্থী হবেন সেই কৌতুহল বেশি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। তাদের দল প্রায় ৭/৮ মাস আগেই ওই আসনের প্রার্থীতা ঘোষনা করেছেন। তিনি হলেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মোঃ শাহাজাহান আলী।

হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লন্ডন প্রবাসীর বসবাস নবীগঞ্জ উপজেলা। এখানে প্রতিটি নির্বাচনে প্রবাসীদের একটি অংশগ্রহন ও প্রভাব থাকে। স্থানীয় নির্বাচন থেকে জাতীয় নির্বাচন সব কয়টিতে লন্ডন প্রবাসীরা কেউ না কেউ প্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহন করেন। এমপি থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার পর্যন্ত লন্ডন প্রবাসীরা প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ইতিপুর্বে দুইজন লন্ডন প্রবাসী হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি হয়েছেন। নবীগঞ্জ উপজেলার ছোট বড় লক্ষাধিক মানুষ লন্ডনে বসবাস করেন। তাই লন্ডনীদের প্রভাব বেশি থাকে সব কয়টি নির্বাচনে। হবিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি থেকে লন্ডন প্রবাসী শেখ সুজাত মিয়া ও জাতীয় পার্টি থেকে এম,এ মুনিম চৌধুরী বাবু এমপি হয়েছিলেন। এবারও লন্ডন প্রবাসী অনেক প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচারণা করছেন।

এছাড়াও আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে কয়েকজন লন্ডন প্রবাসীসহ একঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে হবিগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী নির্বাচনের দৌড়ঝাঁপ তুঙ্গে। একদিকে বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভীড়। অন্যদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী চুড়ান্ত। নতুন রাজনৈতিক শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি এ আসনে তাদের প্রচারণা করছেন। জামায়াতে ইসলামী (দাড়ি পাল্লা) ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল মোঃ শাহাজাহান আলীকে মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছে। তিনি মাঠে-ঘাটে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে উঠান বৈঠক শুরু করেছেন। তিনি অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। অন্যান্য দল এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করে নাই।

হবিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপি থেকে নতুন করে আলোচনায় রয়েছেন ড. রেজা কিবরিয়া ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ খালেদ মহসিন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে তাদের একক প্রার্থী হিসাবে। বিএনপির যারা আলোচনায় ঃ মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১০ জন। মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মীনি জুবাইদা রহমানের খালু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ খালেদ মহসিন, যুক্তরাজ্য যুবদলের সাবেক নেতা তালহা চৌধুরী, সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী, শিকাগো বিএনপির সভাপতি শাহ মোজাম্মেল নান্টু, বিএনপি নেতা শেখ মহি উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মুখলিছুর রহমান, যুক্তরাজ্য যুবদলের সাবেক সভাপতি দেওয়ান মুকাদ্দিম চৌধুরী নিয়াজ, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মতিউর রহমান পেয়ারা, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোশাহিদ আলম মুরাদ এর নাম শুনাযাচ্ছে।

এছাড়াও বিএনপি থেকে নির্বাচন করার জন্য গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া আবারও বিএনপির টিকেটে নির্বাচন করতে পারেন। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাঠে নেই। বিএনপির একটি শক্তিশালী গ্রুপ তাকে প্রার্থী করানোর জন্য তোড়জোর করছেন। মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে শেখ সুজাত মিয়া বলেন, ‘আমি ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়েছি, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছি। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’ ছাবির আহমদ চৌধুরীর আত্মবিশ্বাস, ‘প্রতিকূল সময়ে রাজনীতি করেছি, হেভিওয়েট প্রার্থীদের হারিয়ে দুইবার মেয়র হয়েছি। মামলা-হামলা মোকাবিলা করে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। মনোনয়ন পাওয়ার আশায় আছি।’ সম্প্রতি তার দলীয় পদ পদবী স্থগিতের ব্যাপারে বলেন, আমি আশাবাদী শিগরিই এই আদেশ প্রত্যাহার করবে দল।

ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমি হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করবো। তবে কোন দল থেকে নির্বাচন করবো এখন ঠিক করি নাই। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলে সঠিক সিন্ধান্ত নিবো। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি বিএনপি থেকে যেহেতু ধানের শীষ নিয়ে একবার নির্বাচন করেছি, আবারও করতে কোন দ্বিধা নেই। নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মতিউর রহমান পেয়ারা বলেন, আমাদের বড় দল প্রার্থী সংখ্যা বেশি হওয়া স্বাভাবিক। আমাদের দলের মনোনয়ন যে পাবেন, আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। আমি নিজেই দলীয় মনোনয়ন চাইবো।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ আসনে একক প্রার্থী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ শাহজান আলী। তিনি বলেন, হবিগঞ্জ-১ আসনে মানুষ নতুন কিছু চায়। এখানে জামায়াতে ইসলামি ছাড়া সব দলের এমপি ছিলেন, কেউ উল্লেখ যোগ্য কিছু করতে পারেননি। তাই নবীগঞ্জ ও বাহুবলের মানুষ এবার নতুন ভাবে জামায়াত কে ক্ষমতায় দেখতে চায়, সাধারণ মানুষের চাহিদা নতুন দলের এমপি দেখতে চাই। আমি আশাবাদী আমাদের দলীয় কোন কোন্দল নেই, ভালো ফলাফল পাবো ইনশাআল্লাহ। স্থানীয় নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপিতে প্রার্থীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে ভোটের মাঠে ‘হেভিওয়েট’ হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন. ড. রেজা কিবরিয়া, ডাঃ খালেদ মহসিন, শেখ সুজাত মিয়া ও ছাবির আহমদ চৌধুরী।

জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এনসিপিও ভোটের মাঠে নামার তোড়জোড় চালাচ্ছে। দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছেন জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী পলাশ মাহমুদ, সদস্য অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন আহমেদ জাকি, আরিফ তালুকদার ও তুষার পাঠান। এনসিপির জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মাহবুবুল বারী চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখনই প্রার্থী নিয়ে ভাবছি না, দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে যোগ্যতার ভিত্তিতে একক প্রার্থী বাছাই করব। তবে দলের নেতাদের অনেকেই নতুন মুখ হলেও আন্দোলনের চেতনা আমাদের শক্তি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপিতে নেতৃত্ব নিয়ে দুটি ভাগ হয়েছে। সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শেফুর নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত। তাদের কোন্দলের ফলে আটবার পেছানো হয় কাউন্সিল। পরে শেফু গ্রুপের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে। এ আসনে খেলাফত মজলিস (দেয়াল ঘড়ি) থেকে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা খেলাফত মজলিসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম জাকী। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুর গাছ) থেকেও একক প্রার্থী ঠিক হয়েছে- জেলা জমিয়তের সেক্রেটারি মুফতি সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরী। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ আসনে তাদের প্রার্থী মনোনিত করেছে মুফতি মাওলানা তাজুল ইসলামকে। একই সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জীবন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী হবিগঞ্জ-১ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩১ হাজার ৪২২ জন এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৬, নারী ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৪ এবং হিজড়া ভোটার ২ জন। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সমিতির সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন বলেন, হবিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির তৃণমূলের অনিশ্চয়তা, জামায়াতের সংগঠিত প্রস্তুতি আর এনসিপির আন্দোলনের স্পিরিট’- এই তিন মেরুতে দাঁড়িয়েছে ভোটের সমীকরণ। শেষ পর্যন্ত কে মনোনয়ন পাবেন, আর কে জিতবেন- তা নির্ভর করবে দলীয় কৌশল ও মাঠের লড়াইয়ের ওপর।

হবিগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনটি নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৩৯তম আসন। নির্বাচনী ইতিহাস সংক্ষেপে : পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯১): ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭৬ জন, ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩১৬ জন। জাতীয় পাটির খলিলুর রহমান চৌধুরী রফি (লাঙ্গল প্রতীক) পান ৪১ হাজার ৯৫৭ ভোট এবং বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী (নৌকা প্রতীক) পান ৩৮ হাজার ৯২৭ ভোট। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬): আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করে। বিএনপির শেখ সুজাত মিয়াকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে এ সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১২ জুন ১৯৯৬): ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩ হাজার ৩০৬ জন, ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৭০ জন। আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী ৫২ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পাটির খলিলুর রহমান চৌধুরী রফি পান ৪৪ হাজার ১১৩ ভোট। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০০১): ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৫ জন, ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৬ জন। আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী ৭৪ হাজার ৬৯৩ ভোট পেয়ে পুনরায় বিজয়ী হন। নিকটতম বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া পান ৬৬ হাজার ১৩৭ ভোট। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০০৮): ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৯৭ জন, ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯২ জন। আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া পান ৭৯ হাজার ৮৫২ ভোট।

ঐতিহাসিক উপ-নির্বাচন : দেওয়ান ফরিদ গাজী ২০১০ সালের নভেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন। ২৭ জানুয়ারি ২০১১-এর হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় দেড় হাজার ভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুশফিক হোসেন চৌধুরীকে হারান। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ সুজাতকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী। ফরিদ গাজীর মৃত্যুতে এই আসনটি শূন্য হয়। ঐ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া (ধানের শীষ) ৮১ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুশফিক হোসেন চৌধুরী (নৌকা) পেয়েছিলেন ৮০ হাজার ৪৫ ভোট। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সারা দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১৪): বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে। জাতীয় পাটির এম,এ মুনিম চৌধুরী বাবু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১৮): ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ১৮ জন, ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৪ জন। আওয়ামী লীগের গাজী মোঃ শাহনেওয়াজ (নৌকা প্রতীক) ১ লাখ ৬০ হাজার ৮৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গণফোরামের ড. রেজা কিবরিয়া (ধানের শীষ প্রতীক) পান ৮৫ হাজার ৮৮৫ ভোট। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (৭ জানুয়ারি ২০২৪) : স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী এড. আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া (ঈগল প্রতীক) ৭৫ হাজার ৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন জাতীয় পাটির এম,এ মুনিম চৌধুরী বাবু যিনি পান ৩০ হাজার ৭০৩ ভোট। এ নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো বর্জন করেছিল।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট : পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ আসনে পঞ্চম ও দশম সংসদে জাতীয় পার্টি, ষষ্ঠ ও নবমের উপ-নির্বাচনে বিএনপি এবং সপ্তম, অষ্টম, নবম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। তবে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ফলে আওয়ামী লীগ বর্তমানে রাজনৈতিক ময়দানে কার্যত অনুপস্থিত। এদিকে বিএনপি মাঠ গোছাতে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীকে সামনে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি প্রচার এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। তবে বিএনপিকে ছাড় দিতে নারাজ জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ কয়েকটি ছোট দলও সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছে। তালহা চৌধুরী এ আসনের তরুণ ও গতিশীল প্রার্থীদের মধ্যে বিশেষভাবে আলোচনায় আছেন।

২০২২ সালে তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে তিনি নবীগঞ্জ-বাহুবলের প্রতিটি ইউনিয়নে নেতাকর্মীদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারি ও ভয়াবহ বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণসহ মানবিক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে তিনি তৃণমূলের আস্থা অর্জন করেন। আধুনিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, কর্মীবান্ধব মনোভাব এবং সংগঠনের প্রতি নিবেদিত দায়িত্বশীলতার কারণে বিশেষত যুবসমাজের মধ্যে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এদিকে সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরীও জনপ্রিয়তায় অনেক এগিয়ে। সকল ধর্মবর্ণ, শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্টতা। এক কথায় দলের মনোনয়ন দৌড়ে তিনিও হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

ইতিমধ্যে যুব সমাজের আইকন হিসেবে মোশাহিদ আলম মুরাদও রয়েছেন প্রচারনা মাঠে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রফেরত বিএনপি নেতা শাহ্ মোজাম্মেল নান্টু ব্যানার, ফেস্টুন ও জনসংযোগের মাধ্যমে ইতিমধ্যে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। সাবেক ছাত্রনেতা মুকলিছুর রহমানও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেয়াল লিখন ও ব্যানার-পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণায় সক্রিয়।

এছাড়া বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মনোনিত প্রার্থী মোঃ শাহাজাহান আলী রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্থানে। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে তৃর্ণমুল পর্যায়ে সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়ার পরিচিতি ব্যাপক। এছাড়া আওয়ামীলীগের ভরা যৌবনে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দলকে এই আসটি উপহার দিয়ে সারাদেশে আলোচনায় আসেন। এই আসনে বিএনপি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ ব্যতিত সকল দলই তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন।