
মানিক শিকদার
সময়কাল পূর্ব শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ২ বছর। স্থান মৌলভীবাজার জেলার শমশেরনগর বাগান মাঠ। চরিত্র- সুমন, পারভেজ, শাকিল, আকিব, জয়ন্ত, লিলেন ও এই অধম মানে আমি। এছাড়া চাবাগানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। এবার আসি মূল গল্পে। যদিও গল্প হলেও সত্যি!
সে সময় ২৮ রোজায় আমরা আমাদের কমিটি তৈরি করে ফেলতাম। কমিটির সদস্যরা কেউ জোগাড় করতো দূরবীন, কেউ বসার জন্য মাদুর, বিছানা চাদর, কিছু প্লেট গ্লাস। ২৯ রমজানের বিকেল থেকেই তৎপর চাঁদ দেখা কমিটি। খেলনা দূরবীন দিয়ে অস্তগামী সূর্যের নিচে, মেঘের আড়ালে, বট গাছের পাতার ফাঁকে চাঁদ খুঁজতে খুঁজতে ব্যাকুল কমিটির সদস্যরা। কমিটির এই কর্মকাণ্ড অনেকের মনে শুরুতে কমেডির সুরসুরি দিলেও কেন যেন বেলা বাড়ার সাথে সিরিয়াস রূপ নিতো। দুই একজন টিজ করলেও বেশীরভাগ সিনিয়র আমাদের কাছে সিরিয়াসলি জানতে চাইতেন চাঁদ দেখা গেছে কিনা?
মাগরিবের আজানের আধঘন্টা আগেই মাঠের চারপাশের বাসা থেকে ইফতারি পাঠানো হতো। যারা ইফতারি নিয়ে আসতো একই সাথে তারা ডেলিভারিম্যান ও ম্যাসেঞ্জার হিসেবে ভূমিকা রাখতো। কেননা চাঁদ দেখা গিয়েছে কিনা সেই বার্তা তাদের দিতাম তারা আবার বাসায় থাকা মা খালা ও মুরুব্বিদের পৌঁছে দিতো। নানা রকম ইফতারি আয়োজনে কমিটির ক্ষুধা আরো বেড়ে যেতো। বিশাল মাঠের এদিক সেদিক গিয়ে চাঁদ খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ কেউ কেউ দাবি করতো সে চাঁদ দেখেছে। তখন কমিটির সদস্যরা খালি চোখে কখনো দূরবীন দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতো। এবং যে চাঁদ দেখেছে বলে দাবি করেছে তাকে রীতিমত তিরস্কার করা হতো ভুল তথ্য দেয়ার জন্য। তবে ভুল তথ্য দেয়া অব্যাহত থাকতো। কেউ সুপারি গাছের মাথায় চাঁদ দেখে , কেউ সূর্যের নিচে, মেঘের উপরে কেউ কেউতো পূব আকাশে চাঁদ দেখার দাবি করে বসতো। দাবির পেছনে আবার যুক্তিও কম ছিল না!
ইফতারির সময় হলে খোলা মাঠের মাঝখানে কমিটির সদস্যরা গোল হয়ে মাসের সেরা ও বিচিত্র খাবার গ্রহণ করতো। শুধু তাই নয় সহী তরিকায় সুমনের ইমামতিত্বে মাগরিবের নামাজ আদায় হতো। এর পরই চূড়ান্ত ধাপ! খুঁজতে খুঁজতে শেষ। মুরুব্বীরা এসে জিজ্ঞেস করতো
– কিতাবা কমিটি পাইলায়নি চাঁদ?
– না দাদা, এখনও পাইছি না?
– রোজা মনো ওয় আরকটা বাড়বো, না কিতা বা কমিটি?
– কওয়া যায় না, এর মাঝে উটি যাইতো ফারে!
এরই মধ্যে হঠাৎ চিৎকার! তবে অবশ্যই কমিটির বাইরের কেউ।
– উটছে , চাঁদ উটছে?
– কই কই?
– অবায় ছাও!
– কুনানো?
– দুই গাছর মাঝে!
এরই মধ্যে অনেকেই দেখে ফেলেছে চিকন বাঁকা চাঁদটি। কমিটিও তাদের যন্ত্র খেলনা দূরবীন দিয়ে পরীক্ষা করে ঘোষণা দিলো চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ! সেই সাথে প্রমাণিত হলো চাঁদ দেখা কমিটির কার্যক্রম সফল হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :