
হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ১০নং লস্করপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বেতন ও সেশন ফি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নবম ও দশম শ্রেণির মোট ২৪ মাসের বেশি নেয়া যাবে না মর্মে নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এমনিতেই নিয়ম বহির্ভূত ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। সেই সাথে আদায় করা হচ্ছে ২৪ মাসের অধিক বেতনের টাকা। ফলে অনেক দরিদ্র অসহায় শিক্ষার্থী পড়েছেন বিপাকে। এছাড়াও এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে না কোন রশিদ। যা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা।
এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতে জেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এলাকাবাসির পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন চরহামুয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ নূর আলী।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহির আলী তালুকদার স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ফলে তাকে শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ইতোপুর্বে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছিল। সম্প্রতি তিনি আবারো এসে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেই অনিয়ম দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ফি ধার্য করা হয়েছে ১ হাজার ৬১৫ টাকা। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ১ হাজার ৪৯৫ টাকা। কিন্তু ওই প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছেন ইচ্ছেমতো টাকা। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ হাজার ৬১৫ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ২৫-২৬’শ টাকা। ব্যবসা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ১ হাজার ৪৯৫ টাকা আদায় করার কথা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ২৩-২৪’শ টাকা।
শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী নাইমা আক্তার তৃষা জানান, অন্যান্য স্কুলগুলোতে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়া নির্ধারিত ফি নেয়া হলেও আমাদের স্কুলে তা মানা হচ্ছে না। তৃষা জানান, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ২৫‘শ টাকার নিচে কোন শিক্ষার্থীকেই ফরম পুরণ করতে দিচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক তাহির আলী তালুকদার। এছাড়াও যারা ফরম পূরণ করেছে তাদেরকে কোন রশিদও দেয়া হয় না।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখনো ফরম পূরণ করতে পারি নাই। আমরা অসহায় মানুষ। যদি সরকারের দেয়া নির্ধারিত ফিতে ফরম পূরণ করা যেতো তা হলে আমাদের জন্য ভালো হতো।’
মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী আনোয়ার ইসলাম রাহান বলেন, ‘শুধু এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণই নয় একই সাথে নেয়া হচ্ছে চলতি বছরের সেশনসহ অনেক ফি। ফলে একসাথে এত টাকা জোগার করতে আমাদের কষ্ঠসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই এ বিষয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
মোঃ নূর আলী, ইউপি সদস্য সাহেব আলী ও ফরিদ মিয়াসহ একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের। তবুও প্রধান শিক্ষক তাহির আলী তালুকদার নিজ ক্ষমতাবলে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। অতিরিক্ত টাকা না দিলে কারো ফরম পূরণ করা হবে না বলেও তিনি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এর ফলে ফরম পূরণ করতে না পারায় বেকায়দায় পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। অনেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আবার ছাগল মুরগি বিক্রি করে তাদের সন্তানদের ফরম পূরণ করাচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তাহির আলী তালুকদার প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং এলাকার একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন বলে জানান। যদিও পরে তথ্যপ্রমান উপস্থাপন করলে তিনি অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। প্রধান শিক্ষক তাহির আলী তালুকদার বলেন, দেখেন আমাদের স্কুলে মুজিব কর্নার নেই, নেই কোন ভাল আবাসন ব্যবস্থাও। তাই ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সামান্য কিছু অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। রশিদ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা ফরম পূরণকালে শিক্ষার্থীদের কোন রশিদ দেইনি এটা সত্য। তবে এখন থেকে সবাইকে রশিদ দেয়া হবে।
হবিগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহ জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন বিধান নেই। যদি কোন শিক্ষক এমনটা করে থাকেন তা হলে তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :