
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
চা বাগান সমুহে ব্রিটিশ আমল থেকে প্রচলিত হয়ে আসা দেশীয় মদ তৈরি ও সেবনের প্রবণতা এখনও প্রচলিত রয়েছে। চা শ্রমিকরা সারাদিন পরিশ্রমের পর সন্ধ্যা নামলেই মাদক সেবন করে মাতাল হয়ে উঠে। এরপর শুরু হয় পরিবার সমুহে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে ঝগড়াঝাটি, হানাহানি, ভাঙচুর সহ নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানসহ বিভিন্ন চা বাগানের লেবার লাইনের মধ্যে অবৈধভাবে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে উৎপাদিত হচ্ছে মাদক।
কমলগঞ্জ উপজেলার ডানকান ও ন্যাশনাল টি কোম্পানীর পুরুষ ও নারী শ্রমিকরা জানান, চা বাগান সমুহে ব্রিটিশ আমল থেকেই নিজস্ব উৎপাদিত চোলাই ও হাড়িয়া তৈরির পর এই মদ পান করেন শ্রমিকরা। তবে শিক্ষাধীক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় মাদক পানকারীর সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেলেও চা বাগান সমুহে এখনও প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক ও যুব সমাজ এসব মদ পান করেন। তবে সন্ধ্যার পরেই মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে মদ পানে ব্যস্ত থাকেন। চা বাগানে মদ তৈরি করতে নিশাদল, চিটাগুড়, ইউরিয়া সার, পুরাতন ভাত এসব নানা পদার্থ মিশ্রিত করে চোলাই ও হাড়িয়া মদ তৈরী করা হয়। মদ পানকারীরা এক গ্লাস, দু’গ্লাস থেকে অর্ধ লিটার পর্যন্ত পান করে থাকে। যারা বেশি পরিমাণে পান করে তারা মাতাল হয়ে ঝগড়া-ঝাটি, স্ত্রী, সন্তানদের মারধোর করে। ঘরে গিয়ে হাড়ি-পাতিল, চুলা ভেঙ্গে ফেলে। পঞ্চাশ ভাগ পুরুষ এর মধ্যে যুবকরাই বেশি আসক্ত বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন। তাদের আয়ের বড় একটি অংশ মাদক সেবনে ব্যয় করেন।
শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানের অফিস টিলায় মৃধা পরিবারে চলছে অবৈধভাবে এসব মদের ব্যাপক উৎপাদন। দীর্ঘদিন ধরে মদের উৎপাদন হলেও তা ঠেকানো যায়নি। কোন কোন পরিবার সদস্যরা নিজ নিজ গৃহে বড় বড় চুলা ও ডেকসি বসিয়ে দিনভর মদ তৈরি করেন। এগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বোতলে ভর্তি করে রাখা যায়। প্রতি গ্লাস মদ ২০ টাকা হারে বিক্রি করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কানিহাটি চা বাগানের একজন শ্রমিক নেতা বলেন, চা বাগানে যে কি পরিমাণে শ্রমিকরা মাদকাসক্ত হয়ে বিশৃঙ্খল জীবন ধারন করছে সেটি বলতে আমাদের লজ্জা হয়। প্রায় অর্ধ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক সারাদিনে পরিশ্রম করে যে টাকা পায় সেটি দিয়ে দিনে ও রাতে মদ পান করেই শেষ করে দেয়। ফলে শ্রমিকদের শারীরিক সমস্যা ও পরিবার সমুহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
শমশেরনগর ইউনিয়নের দেওছড়া বাগানের দেওরাজ রবিদাস, কানিহাটি চা বাগানের নারী শ্রমিক সরসতি মৃধা, সরসতি রিকিয়াশন, মীনা বাউরী, আলীনগরের দেওন্তী বাউরী, রাজদেও কৈরী জানান, পুরুষরা সন্ধ্যার পর মদের পাট্টায় গিয়ে মদ পান করে মাতাল হয়ে উঠেন। দিনে কাজ করে যে টাকা পান সে টাকার বেশিরভাগই এখানে শেষ করে দেন। পরে রাস্তাঘাটে ও ঘরে এসে ঝগড়া-ঝাটি, মারধোর, হাড়ি-পাতিল ভাঙচুর করেন। সন্তানদেরও গালিগালাজ করেন। তারা আরও বলেন, এসব মদ পান করে যুব সমাজ ধ্বংস, মানুষের জীবন যাত্রায় ব্যাঘাত, পরিবেশ বিনষ্ট, শারীরিকভাবে সমস্যাসহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরনে চা বাগান সমুহে অবৈধভাবে মদের পাট্টা সমুহ বন্ধ করা উচিত।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন জানান, মাদক বন্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান রয়েছে। চা বাগানেও মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং মামলাও দেয়া হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমল কুমার সেন বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ইতিমধ্যে বেশ কিছু অবৈধভাবে উৎপাদিত মাদক তৈরির আস্তানা উচ্ছেদ করা হয়েছে। শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। সমাজ থেকে যেকোন মুল্যে মাদক নির্মুলে আমরা বদ্ধ পরিকর।
আপনার মতামত লিখুন :