
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
লাখাইয়ে ধলেশ্বরী নদী পানি বেড়ে ৬০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কয়েক হাজার কৃষক। এছাড়া নতুন করে আরও তলিয়ে যাওয়ার ঝুকিতে রয়েছে ৫০০ হেক্টর জমি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) নয়ন মণি সূত্রধর জানিয়েছে- ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাখাইয়ে সুতাং ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে হাওরে প্রবেশ করেছে। এতে দশকানিয়া, বারচর, ভোগার বিল, আঠারোদোনা হাওরের অন্তত ৬০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম আরও ৫০০ হেক্টর জমি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সেই জমিগুলোও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
লাখাইয়ে এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে নিচুঁ এলাকায় রয়েছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি। লাখাইয়ের কয়েকটি হাওরে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ হাওরের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা নৌকা দিয়ে ধান কাটছেন।
লাখাই উপজেলার কৃষক রুবেল মিয়া বলেন, ‘আমি মোট ১২ ক্ষের (২৮ শতকে এক ক্ষের) জমি করছিলাম। কিন্তু ১০ ক্ষের জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাকী দুই ক্ষের জমিও কাটতে পারব কি না জানি না। তিনি বলেন, ‘আমরা সারা বছরে একবারই ফসল পাই। এই ফসলের উপরেই আমাের সবকিছু চলে। সারা বছরের খুরাকির সাথে ছেলে মেয়ের লেখাপড়া ও বিয়েসাদি দেয়া ফসলের উপর নির্ভর করে। এখন সারা বছর কিভাবে চলব বুঝতে পারছি না।’ কৃষক খুরর্শেদ আলী বলেন, ‘আমি মাত্র ৮ ক্ষের জমি করছিলাম। আমার সব জমির ধান এখন পানির নিচে। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে কি খাব তা চিন্তা করতে পারছি না। বাড়িতে বউ বাচ্চায় কান্নাকাটি করতেছে।’
কৃষক আবু তাহের বলেন, ‘১৬ ক্ষের জমির মধ্যে ১৫ ক্ষের জমির ধানই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ১ ক্ষের জমির ধান কিছুটা ডুবার বাকি আছে। এখন এইটা কাটার জন্যও কামলা পাই না। সবাই নিজেরটা নিয়ে ব্যস্ত। ১ হাজার টাকা রোজ দিলেও কেউ কামলা আয় না।’
কামালপুর গ্রামের বিত্তশালী কৃষক সাবেক মেম্বার খোরশেদ আলম। হাজার ক্ষের জমি করেছেন তিনি। বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের এলাকার শত শত বিঘা পানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের ধলেশ্বরী নদীর এদিকে একটা বাধ আমাদের এই সর্বনাশ হতো না। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি একটা বাঁধ নির্মাণের।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন- ‘বর্তমানে সুতাং ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বর্তমানে পানি বৃদ্ধি স্থীতিশীল। তবে ভাতরে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি বাড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকজন লাখাই এবং বানিয়াচংয়ে রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক হাওরে নজর রাখছেন। নিচু জমিগুলো ডুবেছে। তবে কোন বাঁধ এখনও ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি।’
আপনার মতামত লিখুন :