বুলবুল আহমেদ।।
সারা দেশে এখন উৎসবের আমেজ। ধন্যবাদ স্থানীয় নির্বাচনকে। মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে বুঝার উপায়ই নেই করোনা নামে কোন কিছু পৃথিবীতে ছিলো বা আছে। যদিও ইউরোপ এখনো খুবই শংকিত। অবশ্য এর কারণ ও আছে। কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাই হোক মাতৃভূমি বাংলাদেশকে আল্লাহ তায়ালা এখনো হেফাজতে রেখেছেন। না হলে অসচেতনতা এবং অপরিচ্ছন্নতা এই সংকটকে যে কি অবস্থায় নিয়ে যেতো তা আমার কল্পনায় ও আসেনা।
নবনির্বাচিত সকল জনপ্রতিনিধিগনকে অভিনন্দন। আমাদের প্রত্যাশা নির্বাচনের আগে জনগনকে দেওয়া তাদের ওয়াদা তারা রক্ষা করতে স্বচেষ্ট হবেন। যদিও অধিকাংশ সময়ই আমরা তার উল্টোটাই দেখতে পাই। হাড্ডিসার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পর ফুলেফেপে একেবারে ঢোল হয়ে যান। এ র্পযন্ত হয়ে যাওয়া স্থানীয় নির্বাচনে লক্ষনীয় একটি বিষয় হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের উল্লেখযোগ্য হারে পরাজয় বরণ। কিছুকিছু স্থানে তাদের জামানত র্পযন্ত উদ্ধার হয়নি। এটি কি ক্ষমতাসীন দলের জন্য এলার্মিং নয়? প্রশ্ন থেকে যায় প্রার্থী নির্বাচনে কি তৃণমুলের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে জনগন তাদেরকে ভোট কেন দিলো না। আর যদি তৃণমুলের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচন না হয়ে থাকে তাহলে এটি কারা করলেন। কিসের জন্য করলেন বা কোন লাভের জন্য করলেন? দৃশ্যপটে বি এন পি নেই। যদিও পর্দার আড়ালে কার্যক্রমে তাদের উপস্থিতি ঠিকই টের পাওয়া যায়।
স্থানীয় নির্বাচনের মতো নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন কতোটা যুক্তিযুক্ত তাও ভেবে দেখার সময় মনে হয় এসেছে। দেশে শক্তিশালী বিরোধীদল থাকলে না হয় কথা ছিলো। দৃশ্যত কোন বিরোধীদলের অস্তিত্বই নেই। বিরোধীতা শুধুমাত্র সংবাদ সম্মেলনেই সীমাবদ্ধ।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই ভঙ্গুর। গত দুই বছর করোনার কারনে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে করে দেশের নিন্মবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিদ্যাশিক্ষার সুযোগটা ও বন্ধ। কিন্তু প্রশ্ন হলো দেশের সবকিছুই যখন পূর্ণগতিতে চলমান তাতে স্কুল কলেজের দোষটা কোথায়। হাট-বাজার, নির্বাচন, ওয়াজ মাহফিল, বিয়ে শাদী কোন কিছুই করোনার কারনে থেমে নেই। থেমে আছে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মনে হয় ওইগুলোতেই কেবল করোনা ঘাপটি মেরে বসে আছে। উন্নত দেশগুলোতে করোনা পরর্বতী যে বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হলো স্কুল কলেজগুলোকে যতটা পারা যায় নিরাপদ করে তা খুলে দেওয়া। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের একটা প্রবণতা চোখে পরেছে। এই বিষয়টা আমার কাছে খুবই হাস্যকর মনে হলো। ৪০ থেকে ৫০ জন ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে মাত্র ২, বা ৩ জনকে নিয়ে জুম মিটিংয়ে বসে তা আবার সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হাস্যকর নয়তো কি?
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কি ভেবে দেখেছেন যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তারা স্মার্ট ফোন কোথায় পাবে বা ইন্টারনেট
সংযোগ তারা কোল্থেকে পাবে? এবার নাকি মাত্র তিন বিষয়ে পরীক্ষ হবে। এইভাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কিভাবে নিজেকে যোগ্য হিসাবে গড়ে তুলবে তা বোধকরি এখন ই ভাবা উচিত।
প্রশ্নপত্র ফাসের সংস্কৃতি আমাদের দেশে গত কয়েক বছর থেকে প্রচলন হয়েছে। যারা এই কাজ করেন তারা খুবই মেধাবী। না হলে কিভাবে তারা এই দুস্কর্মটি সাধন করেন। তাদের উল্লেখ করার মতো শাস্তি হয়েছে তা অন্তত আমি শুনিনি। গত সপ্তাহ দুয়েক আগে বাংলাদেশ ব্যাককের নিয়ন্ত্রনে ৫টি রাষ্টায়ত্ব ব্যাংকের বোধকরি অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষা ছিলো। সারাদেশ থেকে অসংখ্য চাকুরী প্রার্থী যুবক যুবতী রাজধানীতে গিয়ে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ধারনা করি, বাবা- মা বা অভিবাবকগন কতো কষ্ট করে টাকা পয়সা যোগাড় করে তাদেরকে এই চাকুরী যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্র জানা গেলো প্রশ্ন ইতিমধ্যে ফাস হয়ে গেছে। এনিয়ে পরীক্ষার্থীদের একাসংশ আন্দোলন ও করলেন। লাভ খূব একটা হবে তা আমি মনে করিনা।
এই সংস্কৃতি চলতে থাকলে দেশের মেধা বিদেশে পাচার হওয়ার গতি আরো বেগবান হবে। মেধাবী ছেলেমেয়ে বাইরের দেশে গিয়ে যেকোন ধরনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করবে। কারণ পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের পাশে দাড়াতে সবারই ইচ্ছা হয়। আমাদের অনেকগুলো প্রত্যাশার মধ্যে আরো একটা প্রত্যাশা হলো দেশের যুব সমাজের স্বপ্ন বিনষ্টকারী এইসব কুলাঙ্গাররা তাদের প্রাপ্যটা এমনভাবে পাক যাতে ভবিষ্যতে এইধরনের কাজ আর কেউ করতে সাহস না পায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে যতটা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তার সব অর্জনগুলো ম্লান হয়ে যাক তা আমরা চাইনা। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বরং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসাবে বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা শুধুমাত্র সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নয়, এটা আপনার আমার সকলের দায়িত্ব।
দেশে মাদক এবং র্ধষনের সংখ্যা এখন বিপদ সীমার উপরে। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই এই খবরগুলো ঘুরেফিরে আসে। তার মধ্যে একটা জিনিস আমার কাছে স্পষ্ট নয়। শিরোনাম হলো “বিয়ের প্রলোভনে মাসের পর মাস র্ধষন”। ধরে নিলাম বিয়ের প্রলোভন দেওয়া হলো। তারপর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনও হলো। এটা কি দুজনের সম্মতির ভিত্তিতে হয়নি? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এটি র্ধষন হয় কিভাবে? তারপর কোন কারনে দুজনের বনিবণা না হলেই এটা হয়ে যায় র্ধষন। ধরে নিলাম দুজনই সম্মত, সম্পর্কও ঠিকটাক, বিয়েও হলো। তাহলে কি বিয়ের আগের শারীরিক সম্পর্কটা বৈধ? আমি যতটুকু জানি ইসলাম এটাকে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং যেনা হিসাবে আখ্যায়িত করে। দেশের প্রচলিত আইনেও মনে হয় এটা অগ্রহনযোগ্য। আমার মনে হয় এই ধরনের অবস্থায় আনুপাতিক হারে দুজনেরই শাস্তি পাওয়া উচিত। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
শুধু আইন করলেই দেশ ঠিকটাক চলবে – এটা কখনোই সম্ভব নয় যতদিন না আমরা নিজেরা ঠিকটাক না হচ্ছি। সবাই নিজের জায়গায় ঠিকটাক চলবেন, নিজে ভাল থাকবেন আর আশেপাশের মানুষজনকেও ভাল রাখবেন এটাই আজকের প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন