সিলেট প্রতিনিধিঃ রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের শেষ জেলা সুনামগঞ্জের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সিলেট হয়ে। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীর ওপর একটি সেতু হচ্ছে। এটি নির্মিত হলে সিলেটে না গিয়ে হবিগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যেতে পারবে সুনামগঞ্জবাসী। এতে দূরত্ব কমবে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ। আর সময় বাঁচবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। সেতুটির ৭০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরই যাতায়াতের এই বিশাল সুবিধা ভোগ করবে সুনামগঞ্জের লাখো মানুষ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নানের আগ্রহের কারণে কুশিয়ারা নদীতে নির্মিত হচ্ছে সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু। নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পারের অ্যাপ্রোচের কাজ শেষ। এখন অপেক্ষা ঢালাইয়ের। দ্রুতগতিতে কাজ করছেন শ্রমিকরা। কাজের সমন্বয় করছেন বিশেষজ্ঞসহ সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা।
জানা গেছে, ৭০২ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৩৩ ফুট প্রস্থের এই সেতুটি সিলেট বিভাগের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। দুই দিকের দীর্ঘ অ্যাপ্রোচে রয়েছে দুটি কালভার্ট। সেতু নির্মাণে ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়ক নির্মাণে হাত দেন। তবে ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ ও বিকল্প সড়ক প্রকল্পের কাজ বাতিল করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘সবুজ পাতায়’ ফের প্রকল্পটি নিয়ে আসায় আবারও পুরোদমে কাজ শুরু হয়।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে পরিকল্পনামন্ত্রীর উদ্যোগে বহুল কাঙ্ক্ষিত কুশিয়ারা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দুই দিকের দৃষ্টিনন্দন অ্যাপ্রোচের কাজ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর কাজও প্রায় অর্ধেক শেষ। বর্তমানে সেতুর কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে।
সড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতু নির্মাণের কাজ পাওয়া ‘চায়না সিআর ২৪বি’ নামের সংস্থাটি করোনার কারণে তাদের সেতু বিশেষজ্ঞদের না পাঠানোয় গত বছর থমকে গিয়েছিল কাজ। অবশেষে দ্রুত কাজ শেষ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা-গোমতি নদীতে সেতু নির্মাণে যুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কাজ বাস্তবায়ন করছে।
জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সিলেট শহর হয়ে ঢাকায় যেতে হয়। পাগলা-আউশকান্দি সড়কের কাজ শেষ হওয়ায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে আমাদের বিকল্প যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কুশিয়ারা সেতুটি হলেই আমরা কম সময়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিকল্প যাতায়াত করতে পারব।
একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলী বলেন, প্রতিদিনই দৃশ্যমান হচ্ছে আমাদের স্বপ্নের কুশিয়ারা সেতু। আমার চোখের সামনেই দ্রুত গতিতে চলছে নির্মাণকাজ। সিলেট শহর ঘুরে আমাদের ঢাকা যাওয়া লাগত। সেতুর কাজ শেষ হলে আড়াই ঘণ্টা সময় বাঁচিয়ে এবং কম খরচে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারব, তা কোনো দিন কল্পনাও করিনি।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে গত বছর চীনা বিশেষজ্ঞরা না আসায় এখন দেশীয় বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম রাণীগঞ্জ সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী বছরের শুরুর দিকেই সেতুর কাজ শেষ হবে আশা করছি।
মন্তব্য করুন